সোনা চোরাকারবারিকে পুলিশে দিলেন হাইকোর্ট
প্রকাশ: ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ৪:০৪ : অপরাহ্ণ
সোনা চোরাকারবারি হিসেবে চিহ্নিত চট্টগ্রামের আবু আহম্মদ ওরফে আবুকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দিলেন হাইকোর্ট। রোববার (৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ আদেশ দেন।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন ও মো. হাবিবুর রহমান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও দুদকের পক্ষে আইনজীবী শাহীন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
২০২০ সালের ১৮ মার্চ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (সিআইডি) উপপুলিশ পরিদর্শক মো. হারুন উর রশীদ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জাপতনগর এলাকার ফয়েজ আহম্মদ ওরফে বালী সওদাগরের ছেলে আবু আহম্মদ ওরফে আবুসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সোনা চোরাচালানের মামলা রয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন নামে ব্যাংকে একাউন্ট (হিসাব) খুলে আসামিরা সংঘবদ্ধ হুন্ডি (অর্থ পাচার), সোনা চোরাচালান, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসার সর্বমোট ২০৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৭ টাকা জমা ও ২৪০ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ১৬০ টাকা উত্তোলন করে মানিলন্ডারিয়ের (অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রুপান্তর) মাধ্যমে নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক মালিক হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, চাঁদগাও, ফতেহনগর,রাউজান, ফটিকছড়িতে জমি ও বাড়িসহ দুবাইয়ে তার ২/৩টি দোকান রয়েছে।
এ মামলায় গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আগাম জামিন চান আবু আহম্মদ। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পরে ২২ ফেব্রুয়ারি আবু আহম্মদ আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। ওইদিন চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত মামলার নথি তলব করে ৫ মে আবেদনটি শুনানির জন্য রাখেন। কিন্তু চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে নথি না আসায় ১৩ জুলাই জামিন আবেদনের শুনানি রাখেন। ওই তারিখেও নথি না আসায় ৩১ আগস্ট নথি উপস্থাপন করতে বলে আদালত ৫ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ দেন।
পরে নথি আসলেও আবু আহম্মদের সময় আবেদন করলে জামিন আবেদনের শুনানি আরও কয়েকবার পেছানো হয়। গত ১৩ নভেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির দিন আবু আহম্মদ ফের সময় আবেদন করলে তা না মঞ্জুর করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
বিশেষ আদালতের আদেশে বলা হয়, গত নয় মাস ধরে জামিন শুনানি না করে আসামি সময়ের দরখাস্ত করে আসছেন। যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার শামিল। এরপর আসামি আবু হাইকোর্টে হাজির হয়ে আগাম জামিন চান। গত ৫ ডিসেম্বর আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি শেষে আদালত ৬ ডিসেম্বর আদেশর জন্য রাখেন।
কিন্তু ৬ ডিসেম্বর আসামি হাজির না হলে আবু আহম্মদের আইনজীবী আগাম জামিনের আবেদনটি ‘নট প্রেসড’ (উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ) করতে চাইলে আইনজীবী ফারিয়া বিনতে আলমের প্রতি আদালত উষ্মা প্রকাশ করে ’নট প্রেস’ না করে আসামিকে গ্রেপ্তার ও তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এছাড়া তাকে অবিলম্বে যে কোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করে যথাযথ আদালতে হাজির করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিও নির্দেশ দেন। পরদিন এ মামলার তদবিরকারককে তলব করেন হাইকোর্ট।
তলবে হাজিরের পর ১২ ডিসেম্বর তদবিরকারক নুর মোহাম্মদ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে আদালত আসামিকে কোর্টে হাজির করার জন্য তদবিরকারককে নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে আসামির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করায় রুল জারি করেন আদালত। তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারকে প্রতিবেদন দাখিল দাখিল করার নির্দেশ দেন। পরবর্তী আদেশের জন্য চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দিন রাখেন।
নির্দেশ অনুযায়ী আজ রোববার তদবিরকারক আবু আহম্মদকে হাজির করলে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানান এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।