চট্টগ্রাম, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আজ

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ১১:১৬ : পূর্বাহ্ণ

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বুধবার। আজ কমিশন সভা শেষে নির্বাচনের বিস্তারিত তফসিল ঘোষণা হবে।

মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান।

এর আগে, দুপুর ২টা থেকে সংসদ ভবনে স্পিকারের কার্যালয়ে স্পিকারের সঙ্গে আধঘণ্টার কিছু বেশি সময় বৈঠক করেন সিইসি। এ সময় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুস সালাম ও নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর ইসি কার্যালয়ে সিইসি বলেন, ‌রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়ে আইনের একটি বিধান আছে। তফসিল ঘোষণার আগে স্পিকারের সঙ্গে কমিশনকে সাক্ষাৎ করতে হবে। সেই সাক্ষাতের জন্য আমরা গিয়েছিলাম। স্পিকারের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করেছি।

অচিরেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, কমিশন সভা করে আমরা তফসিল ঘোষণা করবো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামীকাল ১১টায় আমরা তফসিলটা উন্মুক্ত করবো। তখন আপনারা সব জানতে পারবেন। এর বেশি আজ অবহিত করার কিছু নেই।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে স্পিকারের সঙ্গে সিইসির সাক্ষাতের বিধান রয়েছে। সাক্ষাতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন সংসদের বৈঠক নিশ্চিতকরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তার পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কার্যভার গ্রহণ করেন। সে মোতাবেক তার দায়িত্বের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল।

এদিকে, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষের কারণে পদটি শূন্য হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ষাট দিন থেকে নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে।

সংবিধানের এসব বিধানের আলোকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে ২৪ জানুয়ারি। আর ভোট গ্রহণ করতে হবে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

২০১৮ সালে সর্বশেষ এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ঐ বছরের ২৫ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় ছিল ১০ ফেব্রুয়ারি এবং ভোট গ্রহণ হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি। সে সময় ২২ দিনের মধ্যে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে সে সময় বর্তমান রাষ্ট্রপতি একক প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে মো. আবদুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ঐ বছর ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে মো. আবদুল হামিদ সেদিন থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২২ এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন মো. আবদুল হামিদ। সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি আর এ পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।

সংবিধানে যা আছে-

সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে ঐ পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ষাট থেকে নব্বই দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া, ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি পঁয়ত্রিশ বছরের কম বয়স্ক হন; অথবা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হন, অথবা কখনো এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হয়ে থাকেন।

অন্যদিকে ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদে তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। তবে শর্ত থাকে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।

আবার একাদিক্রমে হউক বা না হউক-দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদত্যাগ করতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতি তার কার্যভারকালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না এবং কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতিরূপে তার কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।

নির্বাচন পদ্ধতি:

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘নির্বাচনী কর্তা’ হিসেবে এ নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এজন্য একটি জাতীয় সংসদ কক্ষে সংসদ সদস্যের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নির্বাচনী কর্তা সভাপতিত্ব করবেন।

সংসদের অধিবেশন চলাকালে নির্বাচনের প্রয়োজন হলে কমিশন ভোট গ্রহণের ন্যূনতম সাতদিন আগে স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের সময়সূচি নির্ধারণ করবে। আর সংসদ অধিবেশন না থাকলে ভোট গ্রহণের দিনে স্পিকারের সঙ্গে ন্যূনতম সাতদিন আগে আলোচনা করে সংসদের বৈঠক সরকারি প্রজ্ঞাপন দ্বারা আহ্বান করবে।

রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মনোনয়নপত্রে একজন সংসদ সদস্যের প্রস্তাবক ও একজন সংসদ সদস্যের সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষর থাকতে হবে। এছাড়া যিনি মনোনীত হবেন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সম্মতিসূচক তারও একটি বিবৃতি থাকতে হবে। এ নির্বাচনে ভোটার হবেন সংসদ সদস্যরা। কমিশন একটি ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে।

বৈধ একাধিক প্রার্থী থাকলে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন শেষে একাধিক প্রার্থী থাকলে সংসদের বৈঠকে নির্ধারিত দিনে দুপুর ১২টার পর ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ যেমন প্রকাশ্যে হবে, তেমনি ভোট গণনাও প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সর্বোচ্চ ভোট যদি একাধিক প্রার্থী পেয়ে যান, তবে তাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করবেন। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণাই চূড়ান্ত।

Print Friendly and PDF