প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:৫২ : পূর্বাহ্ণ
মওলানা ভাসানী ছিলেন বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক, যিনি জীবদ্দশায় ১৯৪৭ সালে সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে সমধিক পরিচিত।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়ও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি মাওপন্থী কম্যুনিস্ট তথা বামধারার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার অনুসারীরা অনেকে এ জন্য তাকে ‘রেড মওলানা’ নামেও ডাকতেন। তিনি কৃষকদের জন্য পূর্ব পাকিস্তান কৃষক পার্টির করা জন্য সারা দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা। তিনি পঞ্চাশের দশকেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো। ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম।
মওলানা ভাসানী ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম রাখা হয় ‘ভাসানীর মাওলানা’। এরপর থেকেই তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়।
রাজনীতির পাশাপাশি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন। জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে মহিপুর হক্কুল এবাদ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন, যার অধীনে একটি মেডিকেল, টেকনিক্যাল স্কুল ও হাজি মুহসিন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীত সময়ে এগুলো জাতীয়করণ করা হয়। এ ছাড়া আসামে ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কারিগরি শিক্ষা কলেজ ও শিশুকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সন্তোষে। এ ছাড়াও তিনি কাগমারিতে মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ, সন্তোষে ‘সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা কিনা ‘মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে।
ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ২০০৪ সালে বিবিসি জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় তিনি অষ্টম হন।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া