চট্টগ্রাম, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নগরে ১৫ হাজার অবৈধ সিএনজি টেক্সি

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:৪২ : পূর্বাহ্ণ

 

চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৫ হাজারের বেশি অবৈধ সিএনজি টেক্সি চলাচল করছে। এ খাতে সরকার বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নগরীতে সিএনজি চালিত বৈধ টেক্সির সংখ্যা ১৩ হাজার। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শহর ও গ্রাম মিলে শহরে অন্তত পঁচিশ হাজার সিএনজি টেক্সি চলাচল করে। মহাসড়কে টেক্সি চলাচল বন্ধ হওয়ার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য গাড়ি এখন নগর দাবড়ে বেড়াচ্ছে। এক রেজিস্ট্রেশন দিয়ে একাধিক গাড়ি চালানোর বেশ কয়েকটি ঘটনাও ধরা পড়েছে। নানা গোঁজামিল এবং বিভিন্ন ঘাট ম্যানেজ করে অবাধে চলছে সিএনজি টেক্সি। এসব গাড়ির ভাড়া নৈরাজ্যে নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দফায় দফায় চেষ্টা করেও সিএনজি টেক্সিতে মিটারে ভাড়া আদায়ের সিস্টেম চালু করা সম্ভব না হওয়ায় দিনে দিনে নৈরাজ্য বাড়ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

 

 

সূত্রে জানা যায়, নগরীতে বৈধভাবে চলাচলকারী সিএনজি টেক্সির সংখ্যা ১৩ হাজার। এর বাইরে চট্টগ্রামে গ্রাম এলাকার জন্য সিএনজি টেক্সি রয়েছে ৪৫ হাজার। গ্রামে রেজিস্ট্রেশনবিহীন টেক্সি রয়েছে আরো অন্তত ৫ হাজার। এই ৫০ হাজার গাড়ির একটি অংশ নানা কৌশলে নগরীতে চলাচল করছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রাইভেট গাড়ি হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া প্রায় দেড় হাজার গাড়ি শহর দাবড়ে বেড়ায় নিয়মিত। সবকিছু মিলে বৈধ টেক্সির সাথে বহুদিন ধরে নগরীতে আরো অন্তত ১৫ হাজার রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি চলাচল করছে। একটি সিএনজি টেক্সি রেজিস্ট্রেশন করাতে সরকারকে এককালীন ১৩ হাজার ২০৫ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করতে হয়। প্রতি বছর দিতে হয় বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনবিহীন টেক্সিগুলোকে ট্যাক্স দিতে হয় না। না এককালীন, না বছর বছর। এতে করে প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ নগরীর অলিগলি থেকে রাজপথ সর্বত্র চলছে সিএনজি টেক্সি।

 

মহাসড়কে টেক্সি চলাচল নিষিদ্ধ করার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক টেক্সি নগরীতে চলে এসেছে। এগুলো শহরের রাস্তায় চলাচল করছে। নগর পুলিশ গ্রাম টেক্সিকে শহরে চলতে না দেওয়ার অভিযান শুরু করলেও চোরাগুপ্তা পথে টেক্সিগুলো চলছে। শহরের রাস্তায় বৈধ টেক্সির পাশাপাশি গ্রামের টেক্সি এবং রেজিস্ট্রেশনবিহীন টেক্সি চলাচল করছে। শহরে অবৈধ টেক্সির সংখ্যা কত তার কোনো হিসাব কারো কাছে নেই। তবে শহরের রাস্তায় টেক্সির আধিক্য দেখে পরিবহন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অন্তত পঁচিশ হাজার টেক্সি এই নগরীতে চলাচল করছে। শহরের কয়েকটি পয়েন্টে টেক্সি স্ট্যান্ড করে ওখান থেকে মফস্বলের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী টেক্সির সংখ্যাও অনেক। এসব গাড়ির অধিকাংশের রেজিস্ট্রেশন নেই।

 

 

এদিকে নগরীতে হাজার হাজার সিএনজি টেক্সি চলাচল করলেও ভাড়ার নৈরাজ্য ঠেকানো যায়নি। দুই–তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে একশ টাকা থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হয়। নগরীর মোহাম্মদ আলী রোডের এশিয়ান ইউনির্ভাসিটি ফর উইম্যানের এক ছাত্রী গতকাল আজাদীকে বলেন, তিনি ইউনির্ভাসিটি থেকে খুলশী যেতে ১২০ টাকা ভাড়া পরিশোধ করেছেন। আগ্রাবাদ থেকে জিইসি মোড়ের ভাড়া হাঁকা হয় দেড়শ টাকা। হালিশহর থেকে আগ্রাবাদের ভাড়া আদায় করা হয় ১২০ টাকা। এভাবে শহরের প্রতিটি এলাকায় সিএনজি টেক্সির ভাড়া নৈরাজ্যে অতিষ্ঠ নগরবাসী।

 

 

নগরে বৈধভাবে চলাচলকারী ১৩ হাজার টেক্সিতে মিটার সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এগারো বছর আগে। ২০০৫ সালের ১ জুনের মধ্যে চট্টগ্রামের সকল ফোর স্ট্রোক টেক্সিতে মিটার সংযোজনের জন্য সরকার নির্দেশ দিয়েছিল। ওই বছরের ৬ এপ্রিল সরকার সার্কুলার জারী করে ভাড়ার হারও নির্ধারণ করে দেয়। নানা অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনায় ওই প্রক্রিয়া ভণ্ডুল হয়ে যায়। ছয়টি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে টেক্সিতে মিটার লাগানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। ওই ছয়টি প্রতিষ্ঠান সিএনজি টেক্সি মালিকদের কাছ থেকে ১৩ হাজার মিটার বাবদ প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু একটি টেক্সিও মিটারে চলেনি। ওই মিটার বেশিদিন টিকেওনি।

 

 

সিএনজি টেক্সি মিটারে চালানোর জন্য পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মিটারও লাগানো হয়েছে। কিন্তু একটি টেক্সিও মিটারে চলাচল করেনি। বর্তমানে কোনো টেক্সিতে মিটার নেই। এতে করে চালকদের ইচ্ছেতেই আদায় হয় ভাড়া। জিম্মি হয়ে থাকা নগরবাসীকে বাড়তি ভাড়ায় পথ চলতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম অটো রিক্সা অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ গতকাল আজাদীকে জানান, শহরে ১৩ হাজার টেক্সি চলাচল করে। এর বাইরে কয়েকশ গ্রাম টেক্সি চলতে পারে।

 

 

ভাড়া বেশি নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভাড়া বেশি নেওয়া হয় এটা অস্বীকার করতে পারব না। কিন্তু চালকেরা পরিস্থিতির শিকার। সরকার সিএনজি টেক্সি মালিকদের প্রতিদিনের জন্য ৯শ টাকা ভাড়া আদায়ের গেজেট করে দিয়েছে। কিন্তু মালিকেরা ৯শ টাকা মানেন না। তারা বাড়তি নেন। একটি টেক্সির মালিককে যদি দিনে এক হাজার টাকা দিতে হয়, চালক তো বাড়তি ভাড়া নেবেই। তাকে গ্যাস কিনতে হয়, পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়।

 

 

নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, শহরে গ্রাম টেক্সি চলাচল নিষিদ্ধ। রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি চলাচলেরও সুযোগ নেই। কেউ চোরাগুপ্তা পথে আসলেও আমাদের সামনে পড়লে আটক করি। মামলা করি, ডাম্পিং ইয়ার্ডে পাঠিয়ে দিই। মিটার সংযোজন কিংবা ভাড়ার ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়া পুলিশের পক্ষে কিছু করার সুযোগ নেই।

 

 

Print Friendly and PDF