প্রকাশ: ১২ আগস্ট, ২০২৪ ১০:২৫ : পূর্বাহ্ণ
বিশিষ্ট কবি, ঔপন্যাসিক ও গবেষক হুমায়ুন আজাদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল বিক্রমপুরের রাড়িখালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুর রাশেদ স্কুল শিক্ষক, মাতা জোবেদা খাতুন গৃহিণী।
হুমায়ুন আজাদ রাড়িখাল স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা করে ১৯৭৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
তাঁর পেশাগত জীবন শুরু হয় চট্টগ্রাম কলেজে যোগদানের মধ্য দিয়ে। পরে তিনি ১৯৭০ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৭২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালের পহেলা নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্য অলৌকিক ইস্টিমার এবং প্রবন্ধগ্রন্থ রবীন্দ্রপ্রবন্ধ: রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা। এ সময় তিনি ভাষাবিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি কবিতা লেখাতেও মনোযোগ দেন। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ জ্বলো চিতাবাঘ। তার ভাষাতত্ত্ব বিষয়ক তিনটি গ্রন্থ যথা, বাংলা ভাষার শত্রুমিত্র। তার সম্পাদিত গ্রন্থ: বাঙলা ভাষা (দু-খন্ড), আধুনিক বাংলা কবিতা, মুহম্মদ আবদুল হাই রচনাবলী (তিন খন্ড), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রধান কবিতা; তাঁর ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক দুটি গ্রন্থ, তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান, অর্থবিজ্ঞান।
সাহিত্যস্রষ্টা হিসেবে তার প্রতিভা ও মননের এক অসাধারণ দিক উন্মোচিত হয়েছে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা কিছু গ্রন্থে, যেখানে তার ব্যঞ্জনাধর্মী ভাষা সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। লাল নীল দীপাবলি, ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, কতো নদী সরোবর, বুকপকেটে জোনাকিপোকা, আমাদের শহরে একদল দেবদূত, অন্ধকারে গন্ধরাজ প্রভৃতি বইয়ে এর প্রমাণ পাওয় যায়।
হুমায়ুন আজাদকে দেশের প্রধান প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক লেখক হিসেবে বিবেচনা করা যায়। গতানুগতিক চিন্তাকে তিনি সচেতনভাবেই পরিহার করেছেন। তিনি যা ভাবতেন তাই সাহসের সঙ্গে লিখতেন ফলে তিনি অনেকেরই বিরাগভাজন হন। এক পর্যায়ে তিনি মৌলবাদীদের কর্তৃক মারাত্মকভাবে আহত হন।
২০০৪ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে একদল সন্ত্রাসী হুমায়ুন আজাদকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতরভাবে আহত করে। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হুমায়ুন আজাদ সুস্থ হয়ে ওঠেন। ওই বছরের ৭ আগস্ট একটি গবেষণা বৃত্তি নিয়ে তিনি জার্মানি যান। এর পাঁচ দিন পর ১২ আগস্ট মিউনিখের নিজ ফ্ল্যাটে নিজ কক্ষে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।