প্রকাশ: ১৩ মে, ২০২৪ ১০:৫২ : পূর্বাহ্ণ
আর মাত্র দু’বছর পর অবসরে যাবেন বগুড়ার ট্রাফিক পুলিশ আবদুস সামাদ। পদোন্নতি কিংবা পেনশন-গ্র্যাচুইটির চিন্তা একপাশে রেখে এসএসসির গণ্ডি পেরুলেন তিনি। রোববার প্রকাশিত এসএসসি’র ফলাফলে ৫৭ বছর বয়সী আবদুস সামাদের স্বপ্ন সফল হয়েছে। এই বয়সে এসে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন এসএসসিতে।
জানা যায়, পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণি পাশের পর ১৯৮৭ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগ দেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাসিন্দা আবদুস সামাদ। এসএসসি পাশ না করায় চাকরি জীবনে ব্যক্তিগত আক্ষেপ থাকলেও কখনো সুযোগ হয়ে ওঠেনি পড়ালেখার করার। কয়েক বছরে আগে হোমিওপ্যাথি নিয়ে আগ্রহ তৈরির পর ফের পড়াশোনার ইচ্ছে আর পুরনো স্বপ্ন মাথাচাড়া দেয় সামাদের। বছর দুয়েক আগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। এরপর অংশ নেন এবারের এসএসসি পরীক্ষায়।
সন্তানদের যখন উচ্চ শিক্ষা প্রায় শেষ, সেই সময়ে এসে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর স্ত্রী-সন্তান ও সহকর্মীরা সহযোগিতা করেছেন, বলছেন আবদুস সামাদ। তবে কাজটিকে বুড়ো বয়সের ভিমরতি বলে কটাক্ষও করেন কেউ কেউ। তবে, এতে দমে যাননি তিনি। শেষমেষ ৪ দশমিক ২৫ জিপিএ পেয়ে পাশ করেছেন আবদুস সামাদ।
আবদুস সামাদ বলেন, প্রায় ৩২ বছর ধরে হোমিওপ্যাথির বই নিয়ে পড়ালেখা করেছি। তবে এসএসসি পাশ না করলে হোমিও ওপরে ডিপ্লোমা করা যাবে না- শোনার পর এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সেজন্য নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই।
তিনি আরও বলেন, যখন পড়ালেখা করেছি, তখন পরিবারের সবাই সহযোগিতা করেছে। পাশ করার পর মা অনেক খুশি হয়েছে। কারণ- আমাদের পরিবারে সবাই শিক্ষিত। আমিই শুধু এসএসসি পাশ করতে পারিনি। তিনি জানান, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী থেকে অবসরের পর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চান আবদুস সামাদ।
আবদুস সামাদের এসএসসি পাশের স্বপ্নপূরণের খবরে; খুশী তার সহকর্মীরাও। তারা বলছেন, লক্ষ্যমাফিক চেষ্টা আর অধ্যাবসায়ের কাছে বয়স কোনো বিষয় নয়, সেটি তিনি প্রমাণ করেছেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, তাকে অভিনন্দন জানাই। তার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে শ্রদ্ধা জানাই। সহকর্মী হিসেবে তার এই কৃতিত্বে গর্ব অনুভব করি।