প্রকাশ: ১৯ জুন, ২০২৩ ৫:৩৩ : অপরাহ্ণ
চলতি শতকের শেষে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১২.৩৪ শতাংশ থেকে ১৭.৯৫ শতাংশ সমুদ্রের পানিতে ডুবে যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এ পরিণতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। এছাড়া বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ৫ দশমিক ৮ থেকে ৯ দশমিক ১ শতাংশ কমে যাবে বলেও জানান তিনি।
রোববার (১৮ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী এ সব তথ্য জানান।
নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঝুঁকি নিরূপণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘প্রোজেকশন অব সি লেভেল রাইজ অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট অব ইটস সেক্টরাল (এগ্রিকালচার, ওয়াটার অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার) ইমপ্যাক্টস’ শীর্ষক একটি গবেষণামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফল থেকে দেখা যায়, ৩০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার প্রায় ৩.৮ থেকে ৫.৮ মিলিমিটার। এ গবেষণার তথ্য মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এ শতকের শেষে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১২.৩৪ শতাংশ থেকে ১৭.৯৫ শতাংশ সমুদ্রে নিমজ্জিত হবে। শুধু বর্ণিত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ৫.৮ শতাংশ থেকে ৯.১ শতাংশ হ্রাস করবে।
মন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে খুব দ্রুত ও ব্যাপক পদক্ষেপ না নিলে আগামী দুই দশকের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্প-বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের পূর্বের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে, যা ২১০০ সাল নাগাদ প্রায় ৩.০ ডিগ্রি বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে এন্টার্কটিকার বরফ গলার হারও বেড়ে গেছে বহুগুণে। ১৯৯০ এর দশকের তুলনায় এখন পৃথিবীর বরফ দ্রুত হারে গলছে।
২০২১ সালে ‘দ্য ক্রায়োস্ফিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০-এর দশক থেকে বিশ্বের মোট সামুদ্রিক বরফ, বরফখণ্ড ও হিমবাহের মধ্যে প্রায় ২৮ ট্রিলিয়ন টন গলে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তিন দশক আগে যে হারে বরফ গলত, বর্তমানে তা ৫৭ শতাংশ দ্রুত হারে গলছে। নাসা গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর এক সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে ১৫০ বিলিয়ন টন হারে এন্টার্কটিকার বরফ গলছে এবং প্রতিবছর গড়ে ২৭০ বিলিয়ন টন হারে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এন্টার্কটিকা এবং গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলা পানি বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ৩৩.৩৩ শতাংশ অবদান রাখছে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, জার্মানওয়াচ কর্তৃক প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম; যদিও গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণে বাংলাদেশের ভূমিকা অতি নগণ্য। মূলত শিল্পোন্নত এবং বড় বড় উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। কাজেই বিশ্বের বড় বড় দেশের কার্বন নিঃসরণ হ্রাসই এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তবে, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার স্ব উদ্যোগে বিশদ পরিকল্পনা এবং কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিযোজন এবং প্রশমন পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেছে।
সূত্র – চ্যানেল২৪