প্রকাশ: ৯ জুন, ২০২৩ ৪:০৩ : অপরাহ্ণ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর হামলার অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত সোহেল মাহমুদ অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া জেলার চৌড়হাস ব্রাঞ্চে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শুক্রবার (৯ জুন) অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড (খুলনা সার্কেল) এর উপ-মহাব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
তথ্য মতে, অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল মাহমুদ এবং ভুক্তভোগী শিক্ষক ড. মোস্তাফিজুর রহমান উভয়েই কুষ্টিয়া হাউজিং ডি ব্লক এলাকার বাসিন্দা। প্রতিদিনের মত বুধবার (৭ জুন) সকালে হাঁটতে বের হন ড. মোস্তাফিজ। এসময় আবাসিক এলাকার হাউজিং ডি ব্লকের সামনে আসলে তার উপর হামলা চালান ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল। ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে হামলা চালান সোহেল। এসময় শিক্ষকের উপর উপর্যুপরি কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন সোহেল। এতে ওই শিক্ষক মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে পরিবারসহ শহর ছাড়তে এবং অন্যথায় প্রাণনাশের হুমকি দেন সেই কর্মকর্তা।
পরে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল বারী ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সোহেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা হামলাকারী ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল মাহমুদের শাস্তি ও ব্যাংক থেকে অব্যাহতির দাবি জানান।
অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড (খুলনা সার্কেল) এর উপ-মহাব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন সূত্রে, ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হতে অভিযুক্ত সোহেল অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে কুষ্টিয়ার চৌড়হাস শাখায় কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে গত ৭ জুন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এবং ইবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমানকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত ও অসৌজন্যমূলক আচরনের অভিযোগে বিভাগের শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করে।
বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় ব্যাংকের সুনাম ও ভাবমূর্তী মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। এছাড়া উক্ত শিক্ষকের উপর হামলার কারনে অভিযুক্তর বিচার চেয়ে শিক্ষার্থীবৃন্দ অত্র ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। যা ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাংকের স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়ায় ব্যাংকের ভাবমুর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে, যা অগ্রণী ব্যাংক কর্মচারী চাকুরী প্রবিধানমালা-২০০৮ এর ৪১(গ), ৪১(ঘ) ও ৪১(ঙ) অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমতাবস্থায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী চাকুরী প্রবিধানমালা-২০০৮ এর ৪৪ ধারা মোতাবেক অভিযুক্তকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। যা ৮ জুন হতে কার্যকর হবে। এছাড়া সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে অভিযুক্ত বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা প্রাপ্ত হবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও জিয়া পরিষদ। এর আগে ভুক্তভোগী শিক্ষক ড. মোস্তাফিজসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক কুষ্টিয়ার হাউজিংয়ের ডি ব্লকে বাড়ি নির্মাণ শুরু করলে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা বাঁধা প্রদান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। এরপর তিনি আবারও গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষকদের হুমকি ও লাঞ্ছিত করেন। এই ঘটনায় প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অধ্যাপক।
সূত্র – চ্যানেল২৪