ঐতিহাসিক মুহূর্তে এনসিপির ‘বিচক্ষণতার অভাব’ হয়েছে
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:২১ : পূর্বাহ্ণ
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানকে একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যে সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, আজকে তার আরেকটা নিদর্শন দেখা গেল যে জাতির প্রয়োজনে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে দলগুলো সব এক হয়ে কাজ করতে পারে।’
যেসব দল এতে স্বাক্ষর করেনি, তারা আরও কথা বলে স্বাক্ষর করতে পারবে বলে আশাবাদ জানান তিনি। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যাদের জুলাই ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, তাদের না থাকাকে ‘ভুল-বোঝাবুঝি’ বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল।
‘আমাদের সঙ্গে আলোচনায়, ঐকমত্য কমিশনে যে আলোচনা হয়েছে, তারা প্রায় সব ব্যাপারে পজিটিভ ছিল। যে ব্যাপারটায় সমস্যা আছে, সেটা আলোচনার মাধ্যমে…পরেও তারা এ ব্যাপারে আলোচনা করতে পারত…সেটা নিয়ে আমরা পরে আরো বসতে পারতাম, কথা বলতে পারতাম। আমি মনে করি, এটা বিচক্ষণতার অভাব হয়েছে তাদের, না হলে তারা অবশ্যই এটা সই করত আজকে।’
তবে এটাকে বিভক্তি বলে মনে করছেন না বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘তারা ভুল বুঝতে পারবে এবং তারা সঠিক জায়গায় এসে পৌঁছবে।’
তবে বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিতর্কের জায়গা রয়ে গেল কি না—সে প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা কখনো কোনো দেশেই, কোনো কালেই কখনো কিছু ছাড়বে না। আর দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের স্বভাব হচ্ছে যে আমরা বিতর্ক করতে খুব পছন্দ করি।’
তবে সব কিছুর মধ্যেই যা হয়েছে, তাকে ‘গ্রেট অ্যাচিভমেন্ট’ বা বড় অর্জন বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামনে আরো আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, জুলাই সনদ তত দিন জাতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে থাকবে। আজকের এই দিনটি শহীদদের আত্মত্যাগ, রক্তদান ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। সামনে আমাদের অনেক কাজ বাকি আছে, সব কিছুর সূচনা আজ থেকেই।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই আমরা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তুলতে পারব। সেই কাঠামোর ভিত্তিতেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে, রাষ্ট্রের সব অঙ্গের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ অন্যটির ওপর কর্তৃত্ব করতে পারবে না। সবাই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। যারা এখনো স্বাক্ষর করেননি, আশা করি ভবিষ্যতে তারাও করবেন। এই প্রক্রিয়া উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কিভাবে হবে, তা সংবিধানেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের ২ উপধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি আসনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ৩০০ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। তাই এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। এর পরও যদি প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে চান, বিএনপি তাতে বসতে প্রস্তুত।
শেষ মুহূর্তে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কারো না আসাটা ডিস্টার্বের অংশ: মির্জা আব্বাস
এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়াটা ডিস্টার্বের অংশ বলে বলে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, কিছু দল স্বাভাবিকভাবেই অনুষ্ঠানকে ব্যাহত করছে। এটি নতুন কিছু নয়, তারা সব সময়ই এমন আচরণ করে। জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দেশ গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে এটি বড় অগ্রগতি। কিছু কিছু দল ডিস্টার্ব করছে, অনুষ্ঠানে আসেনি। তারা সব সময়ই ডিস্টার্ব করবে। আমরা লক্ষ রাখছি। সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদ তৈরি হয়েছে। শেষ মুহূর্তে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কারো না আসাটা ডিস্টার্বের অংশ।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।