চট্টগ্রাম, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫ , ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মান্দায় ইউএনও’র উদ্যোগে ৬৪ কোটি টাকার খাস সম্পত্তি উদ্ধার ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় স্পট গণশুনানি

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ ৬:২৫ : অপরাহ্ণ

মাহবুবুজ্জামান সেতু, মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর মান্দায় ইউএনও’র উদ্যোগে ৬৪ কোটি টাকার খাস সম্পত্তি উদ্ধার ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় স্পট গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) পাইকুড়িয়া গ্রামের তেকোনা নামক তাল সারি রাস্তায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উথরাইল বিলে সরকারি খাস ও ভিপি সম্পত্তিসহ বেদখল হয়ে যাওয়া ব্যক্তি মালিকানার সম্পত্তি উদ্ধাওে এ স্পট গণ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানির প্রথম দিনে ভাঁরশো ইউনিয়নের ৪টি মৌজার অন্তত ২৫০ জন কৃষক অংশ নেন। এসময় ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে সেবা প্রার্থীরা উপচে পড়েন।

 

 

এসময় স্পট গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়া, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন জাহান লুনা, মান্দা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল গণি, সার্ভেয়ার এমদাদুল হক,ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মাহবুব,বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

 

 

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়া বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের কালিসফা, বিলউথরাইল, মহানগর ও বাঁকাপুর মৌজায় প্রায় ৮০০ একর সরকারি খাস ও ভিপি উদ্ধার করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬৪ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানার সম্পত্তি প্রভাব বিস্তার করে দখলবাজদের উচ্ছেদ করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানার সম্পত্তি প্রভাব বিস্তার করে দখলবাজদের উচ্ছেদ করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

 

 

তিনি আরও জানান, দেশ স্বাধীনের পর থেকে বোরো মৌসুম শুরু হলে বিলের এসব সম্পত্তির পাল্টাপাল্টি দখল নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিগত সময়ে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এবারেও বিল এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিলে এই স্পট গণশুনানীর আয়োজন করা হয়। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে স্থানীয় ব্যক্তিদের গণশুনানির বিষয়টি জানানো হয়েছে। সে অনুযায়ী জমির প্রকৃত কাগজপত্র থাকা ব্যক্তি নিবন্ধনে অংশ নেন। এরপর নিবন্ধিত ব্যক্তিরা তাদের দাবীকৃত জমির পক্ষে-বিপক্ষে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেন। যাদের প্রমাণাদি সঠিকভাবে প্রমাণিত হচ্ছে, তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা অন্যের জমি জবরদখল করে রেখেছেন, তাদের নোটিশ দিয়ে জমি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যুগের পর যুগ ধরে সরকারের ‘ক’ তফসিলভুক্ত খাস সম্পত্তি দখল করে খাচ্ছেন অনেকে, সেগুলো উদ্ধার করে দখলমুক্ত করা হচ্ছে।

 

 

এত বিপুল পরিমাণ জমির বিরোধ অফিসে বসে মেটানো সম্ভব নয়। আবার এসব কাজে বারবার অফিসে গিয়ে মানুষজনও হয়রানির শিকার হতে পারে। এজন্য সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রশাসনের সেবা পৌঁছে দিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মূলত, উতরাইল বিলের সরকারি সম্পত্তির পাল্টাপাল্টি দখল নিয়ে কয়েকদিন ধরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সংঘাত এড়াতে গণশুনানীর আয়োজন করা হয়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদসহ সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার ও মালিকানা সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। জনস্বার্থ রক্ষায় বদ্ধপরিকর মান্দা উপজেলা প্রশাসন। আগামীতেও  এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

 

 

শুনানিতে অংশগ্রহণকারী পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা নাহিন ইসলাম জানান, দুটি আলাদা খতিয়ানে তাদের প্রায় ১৪ বিঘা জমি ১২ বছর ধরে অন্যের দখলে ছিল। তার বাবা বেঁচে থাকাকালীন জমিগুলো তারা ভোগ করতেন, কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর স্থানীয় কয়েকজন জমিগুলো অবৈধভাবে দখল করে ফেলেন। পড়ালেখার জন্য বাইরে থাকায় জমিগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। হঠাৎ ইউএনও’র এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে তিনি জমি ফেরত নিতে এসেছেন। এরই মধ্যে শুনানিও হয়েছে, যেখানে সেগুলো তাদের জমি হিসেবে রায় দেওয়া হয়েছে। এখন দখলদারদের নোটিশ পাঠালে জমিগুলো দখলমুক্ত হবে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল জলিল জানান, বিল এলাকার এসব জমি নিয়ে প্রতি বছরই মারামারি হতো এবং অনেক মামলা ছিল।

 

 

প্রশাসনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন জমির প্রকৃত মালিকরা স্বস্তি পাবেন, অন্যদিকে সরকারের খাস সম্পত্তিগুলোও সরকারের কাছে ফিরে আসবে।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, শুধুমাত্র মান্দা নয়, জেলাজুড়ে হাজার হাজার বিঘা খাস জমি এবং পুকুর মানুষ ভোগদখল করছে। এগুলো উদ্ধার করা তাদের মূল কাজ। এরই মধ্যে অনেক জমি ও পুকুর উদ্ধার করা হয়েছে এবং কিছু জমির বিষয়ে মামলাও হয়েছে। সেগুলোর পক্ষে আদালতে যথাযথ তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। গণশুনানির এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

 

Print Friendly and PDF