চট্টগ্রাম, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) আজ

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২:১২ : অপরাহ্ণ

‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়/ আয় রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়’। আজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ সালের এই দিনে পৃথিবীতে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) শুভাগমন করেন। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) নামে পরিচিত। ৫৭০ সালের এই দিনে আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় গাম্ভীর্যের ভিতর পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। পবিত্র এই দিন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী প্রদান করেছেন। তিনি হযরত মুহাম্মদ (দ.) বিশ্ব মানবতার জন্য অনুসরণীয় আদর্শ রেখে গেছেন বলে বাণীতে উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে; প্রতিটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার জন্য অনিন্দ্য সুন্দর অনুসরণীয় শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন; যা প্রতিটি যুগ ও শতাব্দীর মানুষের জন্য মুক্তির দিশারি হিসেবে পথ দেখাবে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জশনে

জুলুছের আয়োজন করা হয়েছে। আনজুমান–এ–রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় হুজুর কেবলা আওলাদে রাসূল, রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীক্বত, পীরে বাঙ্গাল, আল্ল্ল্ল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্‌ (মাজিআ) এতে নেতৃত্বে দেবেন। প্রধান মেহমান হিসেবে শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্‌ (মাজিআ) জুলুছে অংশগ্রহণ করবেন। আজ সকাল ৮টা থেকে পবিত্র জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠিত হবে। নগরীর ষোলশহরস্থ আলমগীর খানকা–এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া হতে জুলুছ আরম্ভ হবে।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (দ.) এর জন্মের আগে আরববিশ্ব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। গোটা আরবের মানুষ মহান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃংখলা। ওই যুগকে বলা হতো ‘আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগ’। মানুষে মানুষের হানাহানি ও কাটাকাটি ছিল প্রাত্যহিক। মূর্তিপূজা করতো মানুষ। কন্যাশিশু জন্মালে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাসহ নানা ধরনের অস্থিতিশীলতায় ডুবে ছিল মানবসমাজ। ভয়াল ওই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতাআলা রাসুলুল্লাহ (দ.)-কে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।

মহানবী (দ.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত লাভ বা মহান রাব্বুর আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন।

পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের (পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী) গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সমপ্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) হিসেবে পালন করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ ব্যাপক উৎসবের আমেজে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) পালিত হচ্ছে।

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ সকল কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (দ.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আজ পাঠদান বন্ধ থাকলেও খোলা রাখা হয়েছে।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনেরও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ জশনে জুলুছে নেতৃত্ব দিবেন আল্ল্ল্ল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্‌ (মাজিআ)।

আনজুমান–এ–রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় আজ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত জুলুছ সকাল ৮টায় নগরীর ষোলশহরস্থ আলমগীর খানকা–এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া হতে জুলুছ আরম্ভ হয়ে বিবিরহাট (বামে মোড়)-মুরাদপুর (ডানে মোড়)-ষোলশহর–২ নম্বর গেইট–জিইসি মোড় (ডানে মোড়)-পুনরায় ২ নম্বর গেইট–ষোলশহর–মুরাদপুর–বিবিরহাট হয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন জুলুছ ময়দানে জমায়েত হয়ে দুপুর ১২টায় মাহফিল এবং নামাজে যোহর ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের (পাকিস্তান) তৎকালীন সাজ্জাদানশীন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ৩৯তম অধঃস্তন বংশধর, মহান আধ্যাত্মিক সাধক, পীরে কামেল, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্‌ (রা.)’র পরামর্শক্রমে ১৯৭৪ সাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই জশ্‌নে জুলুস অত্যন্ত ভাবগম্ভীর ধর্মীয় অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান ও শোভাযাত্রা হিসেবে উদযাপন শুরু করে অরাজনৈতিক দ্বীনি সংগঠন আনজুমান–এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট। বর্তমানে এ জশ্‌নে জুলুছ লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মিলন মেলায় রূপ নিয়েছে।

প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও জুলুছে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

Print Friendly and PDF