প্রকাশ: ৬ জুলাই, ২০২৪ ২:৪৩ : অপরাহ্ণ
যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার নিয়েছে। বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি আরও ১ সে.মি বেড়ে আজ (শনিবার) সকালে বিপদসীমার ৯৩ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
যমুনার প্রবল স্রোতে জেলার ৬ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের উপড় দিয়ে হু-হু করে জনপদে পানি ঢুকছে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইসলামপুর ছাড়াও দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার নতুন করে বিভিন্ন এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়েছে।
যমুনা ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাই, জিঞ্জিরাম, দশানীসহ শাখা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার ৬টি উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্গত এলাকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুর্গতরা। বাড়ি-ঘরে পানি উঠায় অনেকে সড়ক, বাঁধ ও স্কুলের উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নিতে গিয়েও বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের গরু ছাগল হাস মুরগী পানির শ্রোতে ভেসে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে জেলায় ৮ হাজার ৮৭২ হেক্টর রোপা আমনসহ জমির বিভিন্ন ফসল এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় সরকারিভাবে যে খাদ্য দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারিবর্ষণে গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ১ সেন্টিমিটার কমে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গাইবান্ধার ফুলছড়ি ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে ঘাঘট নদীর পানি শহরের নতুন ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমা ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৮ ইউনিয়নের ৫০ হাজার পরিবার গেল চার দিন থেকে পানিবন্দী হয়ে আছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। বন্যা এলাকায় শুরু হয়নি তেমন তৎপরতা। বাধ্য হয়ে সহায় সম্বল নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটছেন বন্যা কবলিত এসব মানুষ।
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। ২য় দফা বন্যায় মৌলভীবাজারে কুশিয়ারা, মনু ও জুড়ী নদীর পানি ক্ষণে ক্ষণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাকালুকি হাওর তীরবর্তী রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
কমলগঞ্জের খরস্রোতা ধলাই নদীতে ব্যাপক আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমে যাওয়ার পর নদী তীরবর্তী বেশ কিছু গ্রাম ও বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পুরো নদীর ৬০ কিলোমিটার বাঁধ নদীতে মিশে যাওয়াতে পৌরসভা এবং ইসলামপুর, মাধবপুর, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, মুন্সীবাজার ও রহিমপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা হুমকির মুখে পড়ছে।
কুলাউড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার চারটি ওয়ার্ডের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সড়ক পানিতে ডুবে আছে। আটাশটি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২ হাজার ৬৩ ও উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এখানকার মানুষের বাসাবাড়িসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ডুবে আছে।