চট্টগ্রাম, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদেশিদের দিয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু

প্রকাশ: ১১ জুন, ২০২৪ ১১:৫৭ : পূর্বাহ্ণ

 

চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদেশি অপারেটর দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। সোমবার (১০ জুন) দুপুরে টার্মিনালটির কার্যক্রম শুরু হয়। এটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান ‘রেড সি গেটওয়ে’।

সোমবার দুপুরে টার্মিনালে প্রথম ক্রেনযুক্ত ফিডার জাহাজ ভিড়েছে। সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী ‘মায়েরস্ক দাভাও’ নামের জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৫ দশমিক ৯৯ মিটার ও ড্রাফট (পানির নিচে) ৯ মিটার। কার্যক্রম চালু উপলক্ষে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চত্বরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে আজ ঐতিহাসিক দিন। আমাদের আনন্দের দিন। চট্টগ্রাম বন্দরের বয়স ১৩৭ বছর। প্রথমবারের মতো বন্দরের একটি টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরকে পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছি আমরা। আগামী ২২ বছর বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি এটি পরিচালনা করবে। আজ প্রথম জাহাজ টার্মিনালে ভিড়েছে। এর মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হলো। আশা করছি, এ ধরনের বিদেশি বড় বড় গ্লোবাল পার্টনারের সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। তাতে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের যে অর্থনীতির উন্নয়ন, তা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এখানে অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। অনেক প্রযুক্তি এসেছে। আরও প্রযুক্তি আসছে। বিদেশি অপারেটরদের সঙ্গে আমাদের দেশের লোকজন কাজ করছেন। এতে তারা প্রযুক্তিজ্ঞান ও আরও দক্ষতা অর্জন করবে। দেশে-বিদেশে আমাদের ডিমান্ড আরও বেড়ে যাবে।’

বিদেশি অপারেটর কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করলে বন্দর কীভাবে লাভবান হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব পাবো। বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে, এতে তারা কার্গো, কনটেইনারগুলো হ্যান্ডলিং করবে। এর বিনিময়ে তারা রাজস্বের বড় একটি অংশ আমাদের দেবে। তারা ইতোমধ্যে এখানে দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। সব ইক্যুইপমেন্ট তাদের। চুক্তি অনুযায়ী ২২ বছর পর সব ইক্যুইপমেন্ট আমাদের হয়ে যাবে। তখন টার্মিনাল আবার আমাদের হাতে চলে আসবে। তখন হয়তো আমরা অন্য কোনও অপারেটরকে এটি পরিচালনার জন্য নতুন করে দায়িত্ব দেবো।’

 

তিনি বলেন, ‘বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনার জন্য অপারেটর নিয়োগ দেওয়া সারা বিশ্বে সাধারণ বিষয়। এর মাধ্যমে রাজস্ব অনেক বেড়ে যায়। প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। আজ  সৌদি রেড সি গেটওয়ে এসেছে, পরবর্তী সময়ে বিদেশি অন্যান্য অপারেটর আসবে। লাভটা আমাদেরই হবে।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বাণিজ্য ও সংশ্লিষ্ট শিল্পের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টার্মিনালটি নির্মাণ করেছে। এখানে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ভিড়তে পারবে। সেই সঙ্গে বছরে চার লাখ ৪৫ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বাকি টার্মিনাল থেকে এখানে বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। যেখানে বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ৯ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে, এখানে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে।

 

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও, প্রকল্প এলাকায় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা স্থানান্তরসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ২০২২ সালের জুন মাসে নির্মাণকাজ শেষ হয়। বন্দরের ড্রাইডক থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত ২৬ একর জমিতে এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করেছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

 

টার্মিনালে ৫৮৪ মিটার লম্বা জেটিতে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। রয়েছে ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন (তেল খালাসের) জেটি, ৮৯ হাজার বর্গমিটার আরসিসি ইয়ার্ড, দুই হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার শুল্ক স্টেশন, দুই হাজার ১৫০ মিটার লম্বা ছয় মিটার উচ্চ কাস্টম বন্ডেড হাউস, দুই হাজার ৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্যাক, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার, এক হাজার ২০০ বর্গমিটার মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ এবং পাঁচ হাজার ৫৮০ বর্গকিলোমিটার অফিস ভবন।

 

Print Friendly and PDF