চট্টগ্রামের চারটি উপজেলায় গতকাল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে আনোয়ারায় চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক। তিনি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন। বোয়ালখালী উপজেলায় বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. জাহেদুল হক। পটিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার। চন্দনাইশ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আলহাজ্ব জসিম উদ্দীন আহমেদ।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে কাজী মোজাম্মেল হক আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৮৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৌহিদুল হক চৌধুরী (দোয়াত কলম প্রতীক) পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৮০৭ ভোট। দুই জনের ভোটের ব্যবধান ২২ হাজার ২৩। প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে তৌহিদুল হক চৌধুরীকে সমর্থন করে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যাওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরী পেয়েছেন ৩৩০ ভোট। এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আব্দুল মন্নান মান্না (চশমা প্রতীক) ৩১ হাজার ১৫৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আবু জাফর (টিয়া পাখি প্রতীক) ৩০ হাজার ৪৩৭ ভোট। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন (তালা প্রতীক) পেয়েছেন ১৯ হাজার ৯৭১ ভোট, যুবলীগ নেতা সালাউদ্দিন (টিউব ওয়েল প্রতীক) পেয়েছেন ৬ হাজার ৬১৮ ভোট। সন্তোষ কুমার দে (বই প্রতীক) পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৫৪ ভোট। আর প্রদীপ দত্ত (মাইক প্রতীক) পেয়েছেন ২ হাজার ৩৪৮ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে নির্বাচিত হয়েছেন তরুণ প্রার্থী অ্যাডভোকেট চুমকি চৌধুরী (হাঁস প্রতীক)। তিনি পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৯৪০ ভোট। তার পারভীন আকতার (কলস) পেয়েছেন ২৫ হাজার ৮২ ভোট, আর মরিয়ম বেগম (ফুটবল) পেয়েছেন ২৩ হাজার ৪৮০ ভোট।
নির্বাচিত হওয়ার পর মোজাম্মেল হক অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, এই জয় আনোয়ারাবাসীর। এই জয় আমি আনোয়ারাবাসীকে উৎসর্গ করলাম। নির্বাচনে আমাকে সমর্থন দেওয়ায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান ও এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।, পটিয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাচা খালেক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম দিদার (দোয়াত–কলম প্রতীক)। তার প্রাপ্ত ভোট ৫৬ হাজার ৫৪১ ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ (আনারস প্রতীক) পেয়েছেন ৪৬ হাজার ১৪২ ভোট।
উল্লেখ্য, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় পটিয়ার একটি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। ওই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৬১৫। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে এগিয়ে রয়েছেন আবু ছালেহ মুহাম্মদ শাহরিয়ার (উড়োজাহাজ)। তিনি পেয়েছেন পেয়েছেন–২৩ হাজার ৮৫০ ভোট। এছাড়া ডা. এমদাদুল হাসান (বই) ২৩ হাজার ৭৩, ঝুলন দত্ত (চশমা) ১৯ হাজার ৮৮৯, মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন (টিউবওয়েল) ১১ হাজার ৩০৭, সাইফুল হাসান টিটু (মাইক)৭ হাজার ৩২৩, মোজাম্মেল হোসেন (টিয়া পাখি) ৬ হাজার ৭২৭, মুহাম্মদ বেলাল (বৈদ্যুতিক বাল্ব) ৪ হাজার ৯৫৭ ও আশীষ তালুকদার (তালা) পেয়েছেন ৩ হাজার ১৬৯ ভোট পেয়েছেন।
অন্যদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে এগিয়ে রয়েছেন মাজেদা বেগম শিরু (কলস)। তিনি পেয়েছেন ২৪ হাজার ৮৯৪ ভোট। এছাড়া সাজেদা বেগম (প্রজাপতি)-২৪ হাজার ৭৩১, কানিজ ফাতেমা (পদ্ম ফুল)-২১ হাজার ১৩৭, সুমি দে (বৈদ্যুতিক পাখা)-১৪ হাজার ৫৩৬, মনুর আয়েশা বেগম (ফুটবল)-১০ হাজার ৪৩ ও আফরোজা বেগম (হাঁস) ২ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়েছেন।
বোয়ালখালীতে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. জাহেদুল হক। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বেসরকারি ফলাফলে হেলিকপ্টার প্রতীক নিয়ে মো. জাহেদুল হক পেয়েছেন ৩০ হাজার ৫৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শফিক পেয়েছেন ১৯ হাজার ১১০ হাজার ভোট। এছাড়া মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে মো.নুরুল আমিন চৌধুরী পেয়েছেন ৯ হাজার ২৫১ ভোট, দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে রেজাউল করিম পেয়েছেন ১১ হাজার ৫৩৭ ভোট, ঘোড়া প্রতীক নিয়ে মো. শফিউল আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৬১ ভোট, কাপ পিরিচ প্রতীক নিয়ে এস. এম সেলিম পেয়েছেন ৮৩৪ ভোট ও টেলিফোন প্রতীক নিয়ে এস.এম নুরুল ইসলাম পেয়েছেন ৪৭৫ ভোট।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন মীর নওশাদ। টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৩১ হাজার ৩১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তালা প্রতীক নিয়ে মো. সেলিম উদ্দীন পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪৩৮ ভোট। এছাড়া টিয়াপাখি প্রতীক নিয়ে মো. শফিকুল আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৭৬ ভোট, উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে সজল কান্তি চৌধুরী পেয়েছেন ১২ হাজার ৩৭১ ভোট।
অপরদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উম্মে সালমা। ফুটবল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৩১ হাজার ৩৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রজাপতি প্রতীক নিয়ে শামীম আরা বেগম পেয়েছেন ২৮ হাজার ৪০১ ভোট। কলস প্রতীক নিয়ে মর্জিনা বেগম পেয়েছেন ১৫ হাজার ৯৬৭ ভোট।
চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব জসিম উদ্দীন আহমেদ। তিনি পেয়েছেন ৩৮ হাজার ৩৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবু আহমদ চৌধুরী জুনু ( ঘোড়া প্রতীক) পেয়েছেন ২২ হাজার ৭৪ হাজার ভোট। এছাড়া চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আহমদ হোসেন ফকির পেয়েছেন ৪০২ ভোট এবং অপর প্রার্থী আরিফুল ইসলাম চৌধুরী খোকন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৯৭ ভোট। তবে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা সোলাইমান ফারুকী বৈদ্যুতিক বাল্ব প্রতীক নিয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ হাজার ৭১৩ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পরপর তিন বার নির্বাচিত হয়ে হ্যাট্রিক পূর্ণ করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রুপম দেব উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৮ হাজার ২১৯ ভোট। অপর প্রার্থী মো. একরামুল হোসেন তালা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬ হাজার ৫৩০ ভোট।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন খালেদা আকতার চৌধুরী। উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. রাকিবুজ্জামান রেনু উপজেলা মিলনায়তনে বেসরকারিভাবে ৬৮ কেন্দ্রের এ ফলাফল ঘোষণা করেন। এবার চন্দনাইশে ভোটার ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০৭ ভোট। এরমধ্যে ৬১ হাজার ৯২১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটের হার ৩২.৩২%।