চট্টগ্রাম, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪ , ২৪শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় নির্বাচন ও স্থিতিশীলতা নিয়ে আইসিএলডিএস’র গোলটেবিল বৈঠক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:০৬ : অপরাহ্ণ

 

জাতীয় নির্বাচন ও এর স্থিতিশীলতা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছে ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (আইসিএলডিএস)। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। আইসিএলডিএসের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রশীদের সূচনা বক্তব্যের মধ্যদিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বৈঠকটির সঞ্চালনায় ছিলেন ড. ফারজানা মাহমুদ এবং নূর সাফা জুলহাস। গোলটেবিল বৈঠকে আমন্ত্রিত অতিথিরা জাতীয় নির্বাচন ও স্থিতিশীলতা বিষয়ে তাদের মূল্যায়ন তুলে ধরেন।

বৈঠকে সূচনা পত্রে বলা হয়, আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনী আমেজ দেশের শহরে- বন্দরে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে একদিকে নির্বাচনী প্রচার জোরে-শোরে শুরু হলেও অপরদিকে কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন শুধু নয় নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিবে দৃশ্যমানভাবে নাশকতার পথ বেছে নেয়ায় জননিরাপত্তার হুমকি যত না তৈরি হয়েছে তার চেয়ে জনমনে শঙ্কা বেড়েছে। ইতোমধ্যে অন্তত নাশকতায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছে। অপরদিকে নির্বাচন প্রচারণার উৎসবের পাশাপাশি প্রতিপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, কিছু সহিংস ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

এতে আরও বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনা করবেন একটি সংসদ ও সরকার গঠন করে। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি স্থাপিত হয় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে। জনগণের সমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক দল দেশ শাসনের ম্যান্ডেট নিতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আহরণ করবেন।

 

এই প্রচলিত গণতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করে নির্বাচনের চালের মোকাবিলা করার সৎ সাহস দেখাতে বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে কিছু রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হয়ে ক্ষমতার পালা বদলের জন্য নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পথ থেকে সরে গিয়ে একাধিকবার নির্বাচন বর্জন করে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করে অনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার সিঁড়ি খুঁজে বেড়িয়েছে এবং এই নির্বাচনে কোনো ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়নি।

 

এবার দেশের মানুষের কল্যাণের বিপরীতে বিদেশি শক্তিকে প্রভাবিত করে দেশের চলমান অগ্রগতি ও গণতন্ত্রের গতিধারাকে রুখে দেবার অপউদ্দেশ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার স্বপ্নের জাল বুনে সময় অতিবাহিত করছে। অপরদিকে গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্র তৈরি করার অপচেষ্টায় সহিংসতা ও নাশকতাকে পুঁজি করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের ছক কষছে। নির্বাচন স্থিতিশীলতার মৌলিক উপাদান। নির্বাচন বানচাল মূলতঃ স্থিতিশীলতা বিনষ্টের একটি অপচেষ্টা মাত্র। গণতন্ত্র সুরক্ষা ও পরিশীলিত করতে নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। অতএব নির্বাচন অনুষ্ঠান করা অথবা নির্বাচন বর্জন স্থিতিশীলতা অর্জনে কোন পথ জাতির জন্য কল্যাণকর হবে তার উপর নাগরিক মতামত খোঁজার আজকের প্রচেষ্টা বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

সূচনা পত্রে আরও বলা হয়, নির্বাচন নিয়ে অনেক গল্প তৈরি করে নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের আশা বিনষ্ট করার কৌশলের উপস্থিতি দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ দেখাতে নির্বাচন কমিশন সক্ষমতা দেখাচ্ছে এবার। সরকারকে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা থেকে আলাদা রেখে নির্বাচন করার নিদর্শন দেখা গেছে ইতোমধ্যে। সরকার ও শানকদলের সহযোগিতাও অতিতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে উল্লেখ করার মত অগ্রগতি দৃশ্যমান।

 

বৈঠকে বক্তব্য দেন ডিবিসির সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু। তিনি বলেন, নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দল আসেনি। তাই ঘাটতি বাজেটের মত কতটুকু ঘাটতি সেটা নিয়েই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে।

৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের তিনটি মানদণ্ডের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের পক্ষেই এই নির্বাচন হবে।

দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, একেক জায়গায় স্থিতিশীলতার সংজ্ঞা একেক রকম। আমাদের স্থিতিশীলতা বলতে বুঝায়, স্বাধীনতার পক্ষে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত থাকবে সমাজ ও দেশ। বিএনপি আসলে হয়ত আবার গ্রেনেড হামলা দেখতে হতে পারে। এখন আমাদের দেশে ভোটার এমপাওয়ারমেন্ট হচ্ছে।

 

পীযূষ বন্দোপাধ্যায় আইসিএলডিএসকে যুগোপযোগী আলোচনার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় ধন্যবাদ দিয়ে শুরু করেন। নির্বাচন হবে আর শান্ত নদীর মত থাকবে সেটা সম্ভব নয়। আমরা অসাম্প্রদায়িক ও শান্তি নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। মাইনরিটি যেন ভোটের ভয়ে না থাকে। ভোটারদের আনতে হবে কেন? তারা আসবেন, তাদের আনার ব্যবস্হা করতে হবে। আমি মনে করি, তরুণ ভোটাররা এবারও আসবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্বাচন হয়তো শতভাগ অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। তবে একটা বড় অংশ নির্বাচনে আসছে, লড়াই করবে ভোটে। আগের তুলনায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত কর্মতৎপর।

 

আলোচকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা, সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল, আবু সাঈদ খান, নঈম নিজাম, ড. সাদেকা হালিম, ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, আশরাফ উদ্দিন চুন্নু, আবুল হোসেন চৌধুরী, সাবেক ক্রিকেটার রকিবুল হাসান, ফারুক ফয়সাল ও এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক এলাহী চৌধুরী প্রমুখ। বৈঠকটি বেসরকারি টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

 

 

সুত্র: চ্যানেল২৪

Print Friendly and PDF