প্রকাশ: ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১০:৪৫ : পূর্বাহ্ণ
মাহবুবুজ্জামান সেতু,নওগাঁ প্রতিনিধিঃ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁর-৬টি সংসদীয় আসনে ৫৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২ জন বৈধতা হারিয়েছেন। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) রিটার্নিং কর্মকর্তা নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রার্থীদের পক্ষে এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনে অসঙ্গতি, ঋণ খেলাপি, তথ্য গোপন, অসম্পন্ন ও ত্রুটির কারণে ওই ২২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে বাতিলকৃতদের বেশিরভাগই আপিল করার কথা জানিয়েছেন।
নওগাঁ-১ ( সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন-৬ জন, এর মধ্যে দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বৈধ প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত সাধন চন্দ্র মজুমদার, জাতীয় পার্টির আকবর আলী, জাকের পার্টির মোহাম্মদ আলী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজেদ আলীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামান তোতা ও সোহরাব হোসেনের মনোনয়নপত্র।
নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন ৯ জন, যাচাই বাছাইয়ে ৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বৈধ প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত শহীদুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির তোফাজ্জল হোসেন, জাকের পার্টির এসজেএমআর ফারুকের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুল আলম, মেজবাহুল আলম, আজিজার রহমান, আমিনুল হক, আইয়ুব হোসেন ও কাজল চন্দ্র দাসের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছি) আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন ১১ জন, এরমধ্যে ৫ জনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনীত সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, জাতীয় পার্টির মাসুদ রানা, জাকের পার্টির আলাল হোসেন, তৃনমূল বিএনপির সোহেল কবির চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ছলিমুদ্দিন তরফদার ও মাহফুজা আকরাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে এনপিপির স্বপন কুমার দাস, বিএনএফ এর জাবেদ আলী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ডিএম মাহবুবুল মান্নাফ, শামিমুর রহমান ও ফিরোজ হোসেনের মনোনয়নপত্র।
নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ১০, এরমধ্যে ৪ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাহিদ মোর্শেদ, জাতীয় পার্টির আলতাফ হোসেন, জাকের পার্টির দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আব্দুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ও এসএম ব্রহানী সুলতান মাহমুদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সামাদ, আফজাল হোসেন ও জিয়াউল হকের মনোনয়নপত্র। দলীয় মনোনয়নে প্রার্থী পরিবর্তন করায় বাংলাদেশ কংগ্রেসের কামাল পারভেজের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন মোট ৭ জন। একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, জাতীয় পার্টির ইফতারুল ইসলাম বকুল, জাকের পার্টির মশিউর রহমান, জাসদের আজাদ হোসেন মুরাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ ও আব্দুল মালেকের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। হলফ নামায় স্বাক্ষর না থাকা, সম্পদ বিবরণী দাখিল না করাসহ ৩টি কারণে এনপিপির খন্দকার আমিনুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই) আসনে ১২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে ৪টি মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু বেলাল হোসেন জুয়েল, তৃনমূল বিএনপির পিকে আব্দুর রব, বাংলাদেশ কংগ্রেস সরদার মো. আব্দুস সাত্তার, জাকের পার্টির রবি রায়হান, স্বতন্ত্র প্রার্থী নওশের আলী, ওমর ফারুক ও জাহিদুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। হলফ নামায় স্বাক্ষর না থাকায় ও মামলার তথ্য গোপন করায় ও অসম্পন্ন হওয়ায় এনপিপির খন্দকার ইন্তেখাব আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র অসম্পন্ন ও সংযুক্ত এক শতাংশ ভোটারের সম্মতিতে অসঙ্গতি ও মামলার তথ্য গোপন করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ রতন, নাহিদ ইসলামের, শাহ জালাল উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা জানান, বাতিলকৃত মনোনয়নের পক্ষে স্ব-স্ব প্রার্থীরা আগামীকাল ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন। আগামী ১৮ তারিখে প্রতীক বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত যেন আচরণ বিধি ভঙ্গ না করতে প্রার্থীদের অনুরোধ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ জন যুগ্ম জেলা জজের নেতৃত্বে জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের জন্য ৬ জন সিনিয়র সহকারী জজ ইলেক্ট্ররাল ইনকোয়ারি কমিটি হিসেবে কাজ করবেন। আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ হলে তাদের কাছে যে কেউ অভিযোগ করতে পারবেন।
এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুই পৌরসভায় অতিরিক্ত দুইজন বিচারক আচরণ বিধিমালা পর্যবেক্ষণ করবেন। কেউ বিধিমালা ভঙ্গ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।