পৃথিবীতে মানুষ যা কিছুর মালিক হয় তা আল্লাহরই দান। আল্লাহ তাআলা চাইলে মানুষকে অর্থ-কড়ি দান করেন। চাইলে দান করেন না। ইসলামে সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে কৃপণতা যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি প্রাচুর্যের সময় অপচয় অপব্যয় করে সম্পদ খরচ করাও নিষিদ্ধ। অর্থ সঞ্চয়ের বিষয়েও ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা অপচয় ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা আহার ও পান করো, আর অপচয় করো না, তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না (সুরা আরাফ ৩২)
আবার অর্থসঞ্চয় করতে গিয়ে কৃপনতাকেও আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ বলেন, ‘যে অর্থ সঞ্চয় করে ও তা বারবার গুণে দেখে।’ (সুরা হুমাযাহ ২) এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দার অর্থলিপ্সার কথা বলেছেন। আয়াতে একে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, অর্থ লিপ্সার কারণে সে তা বারবার গণনা করে। অন্যান্য আয়াত ও হাদিস সাক্ষ্য দেয় যে, অর্থ সঞ্চয় করা সর্বাবস্থায় হারাম ও গুনাহ নয়। তাই এখানে উদ্দেশ্য এই সঞ্চয় হবে, যাতে জরুরি হক আদায় করা না হয় কিংবা গর্ব ও অহমিকা লক্ষ্য হয় কিংবা লালসার কারণে দিনের জরুরি কাজ বিঘ্নিত হয়। তখন সে অর্থ সঞ্চয় হারাম বলে বিবেচিত হবে। (মারেফুল কোরআন)
বিষয়টি রসুল সা. হাদিস থেকে আরো স্পষ্ট হয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, হযরত রসুলুল্লাহ সা. বলেন, উত্তম দান তাই, যা নিজ অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে হয়। (বুখারি-২/১১২) কৃপণ না হয়ে ইসলাম নির্দেশিত খাতে খরচে কোনো রকম দ্বিধা না করে, হারাম পথে খরচের সব পথ বন্ধ করে দিয়ে, অপচয়-অপব্যয় না করার মাধ্যমে মিতব্যয়ী হলে দারিদ্র্যমুক্ত জীবন আল্লাহ তাকে দান করবেন।
এটা রসুলে কারিম সা.-এর ভবিষ্যদ্বাণী। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, রসুলে কারিম সা. বলেন, যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না। (মুসনাদে আহমাদ-৭/৩০৩)
অপচয় ও কৃপণতা দু’টোই ইসলামে নিষিদ্ধ। মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা ইসলামের শিক্ষা। যারা অপচয় এবং কৃপণতার পথ পরিহার করে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করবে আল্লাহ তাদেরকে নিজের বান্দা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।তার সাথে সাথে পরিবার সন্তান সন্ততির জন্য ভবিষ্যতে দুনিয়ায় টিকে থাকতে সঞ্চয়ের কথাও বলেছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ বলেন, (আল্লাহর বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যায়ও করে না আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী (সুরা ফুরকান ৬৭)
পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ আরো বলেন, ‘তুমি (কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখে একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না। আবার (অপব্যয়ী হয়ে) একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল ২৯)।সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারো মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবীজি সা. কখনো পছন্দ করেননি। রসুল সা. বলেন, ‘তোমার উত্তরাধিকারীদের মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদের সচ্ছল রেখে যাওয়াই উত্তম।’ (বোখারি ১/৪৩৫)। ইসলাম সঞ্চয়কে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছে, তা আরও স্পষ্ট হয় রসুলে করিম সা. এর এক হাদিস থেকে।
রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘উত্তম দান তা-ই, যা নিজ অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে হয়।’ (বোখারি ২/১১২)। কারণ যদি সমুদয় সম্পত্তি দান করে দেয়া হয়, তাহলে কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে তা মেটাবে কোত্থেকে? কৃপণ না হয়ে মিতব্যয়ী হয়ে সঞ্চয় করলে হাজার কোটি টাকার মালিক হতেও ইসলাম বাধা দেবে না।হযরত ইমাম আবু হানিফা রহ. ধনী ছিলেন। ইরাক, সিরিয়া ও হেজাজ জুড়ে বিস্তৃত এলাকায় রেশমি কাপড়ের বিশাল ব্যবসা ছিল তার। তাই তো তিনি রাষ্ট্রীয় হাদিয়া-তোহফার পরোয়া না করে নিজ উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ, জ্ঞানের সেবা ও গরিব শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতেন। সঞ্চিত অর্থ থাকলেই তো অর্থনির্ভর সওয়াবের কাজগুলো করা যাবে।
রোজাদারকে ইফতার করানো যাবে। হাদিয়া আদান-প্রদান করা যাবে। শরিক হওয়া যাবে জনকল্যাণমূলক কাজে। অর্থ ব্যয় করে সদকায়ে জারিয়ার অফুরন্ত সাওয়াব হাসিল করা যাবে। আবার উদ্বৃত্ত অর্থ যখন নিসাব পরিমাণ হবে। তাতে বর্ষপূর্তি হবে, তখন জাকাতের মাধ্যমে সে সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ গরিবদের মধ্যে দান করে লাভ করবে।