চট্টগ্রাম, রোববার, ১৯ মে ২০২৪ , ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন আজ

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ১০:০৯ : পূর্বাহ্ণ

 

২০১৪ সালে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ৯ বছর পর শেষ হয়েছে টানেলের কাজ। শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুল প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

 

উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০১৪ সালের ১০ জুন বেইজিংয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এরপর শুরু হয় নির্মাণ প্রক্রিয়া। প্রায় ৯ বছর পর শেষ হয়েছে টানেলের নির্মাণ কাজ।

 

 

২০১৩ সালে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) এবং হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অভি অরূপ অ্যান্ড পার্টনারস হংকং লিমিটেড যৌথভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি পরিচালনা করে। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।

 

 

২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানির’ সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ সেতু বিভাগ। কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতেই এই প্রকল্প।

৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে। নদীর তলদেশ থেকে টানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা ৩১ মিটার। টানেলে আছে বিপরীতমুখী দুটি টিউব।

পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলীর ওপারে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে আবার ভূপৃষ্ঠে উঠেছে।

৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে টিউব দুটির একটির সঙ্গে অপরটির দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেইন আছে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিক থেকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাঠগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।

 

 

নদীর দক্ষিণে আনোয়ারায় রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল ও পারকি সমুদ্র সৈকত। কর্ণফুলী পেরিয়ে আনোয়ারা দিয়েই বাঁশখালী, কক্সবাজার, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে।

শুরুতে টানেলের ভেতর গাড়ির গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। টানেলে কোনো থ্রি হুইলার বা মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। টানেলের ভেতর হাঁটাও যাবে না।

 

 

টানেল ব্যবহারে বিভিন্ন যানবাহনের জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হার হল- কার, জিপ ও পিকআপ ২০০, মাইক্রোবাস ২৫০, বাস (৩১ সিটের কম) ৩০০, বাস (৩২ সিট অথবা বেশি) ৪০০, বাস (থ্রি এক্সেল) ৫০০, ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) ৪০০, ট্রাক (পাঁচ থেকে আট টন) ৫০০, ট্রাক (৮ থেকে ১১ টন) ৬০০, ট্রাক (থ্রি এক্সেল পর্যন্ত) ৮০০, ট্রেইলার (ফোর এক্সেল পর্যন্ত) ১০০০ টাকা এবং ট্রেইলার (ফোর এক্সেলের বেশি) এর ক্ষেত্রে ১০০০ টাকার সাথে প্রতি এক্সেলের জন্য ২০০ টাকা করে বাড়বে।

 

 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে যুক্ত করবে এই টানেল। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও সহজ হবে। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে একটি নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলাও এই টানেলের অন্যতম লক্ষ্য।

চট্টগ্রাম বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত করতেও এই টানেল ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

 

সূত্র –যমুনা নিউজ

Print Friendly and PDF