প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:১৪ : অপরাহ্ণ
বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। এসব ঋণের ওপর সুদের হারও বাড়িয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। এতে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া বিদেশি ঋণের সুদ এবং আসল পরিশোধে আগের চেয়ে এখন বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে।
এদিকে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমছে। রেমিট্যান্সের গতিও ফেরেনি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও চাপে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রার অন্য প্রধান দুই উৎস প্রবাসী আয় কমে আসা এবং রপ্তানি আয়ের ধীর গতির কারণে আগে থেকেই চাপে রয়েছে রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ ক্রমেই কমে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী এখন ২২ বিলিয়ন ডলারের কম। এক বছরে কমেছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।
সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল মিলে পরিশোধ করতে হয়েছে ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা আগের একই সময়ের চেয়ে ৪১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই মাসে যার পরিমাণ ছিল মাত্র ১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত জুলাইতে মূল ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই মাসে যা ছিল ১১ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। আর সুদ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।
ইআরডির প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে ৩২৮ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হবে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ২৭৪ কোটি ডলার। গত মার্চ পর্যন্ত বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, বিদেশি ঋণ পরিশোধের দায় ক্রমেই বাড়বে। তিনি বলেন, নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার বেড়েছে অথচ রেয়াতকাল পরিশোধের সময়সীমা কমেছে। আবার এসব ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় দিয়ে। সেখানে গতি কম। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ঋণ গ্রহণে সরকারকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। ঋণের ব্যবহার হতে হবে সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী, স্বচ্ছ ও সময়নিষ্ঠ।এদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে গতি বাড়েনি। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৭৩ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। সে হিসেবে দৈনিক এসেছে ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ডলার। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪৮ কোটি ডলার। এমন হলে তা আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১১ কোটি ডলার কম হবে। আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স ২১ শতাংশ কমেছিল।
২০১৫ সালে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর থেকে উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া ঋণের ওপর সুদ বাড়ছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়াসহ আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে ঋণে সুদের হার বাড়িয়ে থাকে উন্নয়ন সহযোগীরা। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠনে সারা বিশ্বেই ঋণের চাহিদা বেড়েছে। ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিবেচনায় সুদের হার কিছুটা বেড়েছে। তবে সারা বিশ্বেই সুদের হার বাড়িয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা।
বৈশ্বিক সুদহার নির্ধারণের অন্যতম মাপকাঠি লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারড রেটের (লাইবর) পরিবর্তে সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (সোফর) নামে নতুন ঋণব্যবস্থা চালুর ফলেও সুদহারে পরিবর্তন এসেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ‘সোফর রেট’ বেড়ে ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। এ কারণে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এখন ৫ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক থেকে আগে শূন্য ২৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যেত। এখন তা শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ২০ শতাংশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণে সুদের হার ১ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ। ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণে সুদের হার ২ থেকে প্রায় ৪ শতাংশ। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য জাইকার ঋণের সুদের হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। গত বছর পর্যন্ত এ হার ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। এখন তা ২ দশমিক ২৬ শতাংশ। জানতে চাইলে ইআরডির ফরেন এইড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুরোনো ঋণের সুদের হারে পরিবর্তনের সুযোগ নেই। নতুন ঋণের ক্ষেত্রে একেক উন্নয়ন সহযোগীর একেক হারের সুদ রয়েছে।
সূত্র: দৈনিক সমকাল