প্রকাশ: ২০ জুন, ২০২৩ ২:৫৬ : অপরাহ্ণ
সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রয়াত মাহবুবা রহমান আখিঁকে ভর্তির সময়ে উপস্থিতির ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছে বলে দাবি করেছেন ডা. সংযুক্তা সাহা। মঙ্গলবার (২০ জুন) রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় পরীবাগের নিজ বাসায় গণমাধ্যমের সঙ্গে এসব কথা বলেন অভিযুক্ত ডা. সংযুক্তা সাহা।
তিনি বলেন, হাসপাতালের পক্ষ থেকে এ ধরনের অসদাচরণ, অপরাধমূলক পদক্ষেপ আমার সুনামকে বেআইনিভাবে পুঁজি করে কিছু আর্থিক লাভের জন্য একটা মানুষের জীবন নিয়ে রোগিদের বিভ্রান্ত করার জন্য অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই না।
তিনি বলেন, আঁখি আমার রোগী ছিলেন না। তিনি কুমিল্লার একটি স্থানীয় হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছেন। এ বছরের মার্চে তিনি দুই বার সেন্ট্রালে এসে আমাকে দেখিয়েছিলেন। নিয়মিত রোগী হতে হলে একজন গর্ভবতীর গর্ভাবস্থার শুরুতে প্রতি মাসে একবার এবং শেষের দিকে দুই সপ্তাহে একবার দেখাতে হয়। আঁখি আমার নিয়মিত রোগী ছিলেন না।
ডা. সংযুক্তা সাহা, আমি আঁখি এবং তার সন্তানের জন্য শোক প্রকাশ করছি। তাদের বিদেহী আত্মার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। নবজাতকের পিতা মো. ইয়াকুব আলী এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। আমাদের সবার জন্যই এই অবহেলাজনিত মৃত্যু কাম্য নয়। আসুন আমরা এই সমস্যাটি এড়িয়ে না গিয়ে প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বের করি।
এই ডাক্তার বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল প্রকৃত ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাইছে এবং নিজেদের দোষ আড়াল করার জন্য সব রকম পন্থা অবলম্বন করছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সদা ব্যস্ত আছেন। তাদেরকে খুঁজে বের করা উচিত।
ডা. সংযুক্তা বলেন, আমিও একজন সন্তানের মা, আমি একজন চিকিৎসক। আমি এদেশেরই লোক। দেশ এবং সমাজের প্রতি আমার যে দায়বদ্ধতা, সেখান থেকেই আমি মিডিয়ার সামনে সঠিক তথ্যটা তুলে ধরতে চাই।
এ দিকে ভুল চিকিৎসায় নিহত মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতক ছেলে সন্তানকে কুমিল্লার লাকসামে বাবার বাড়ির পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে। সোমবার (১৯ জুন) রাতে জেলার লাকসাম উপজেলার গাইনের ডহরা গ্রামে স্থানীয় মাদরাসা মাঠে একসঙ্গে দুটি জানাজার নামাজ শেষে মা ও শিশুর মরদেহ দাফন করা হয়।
এর আগে রাত সাড়ে ৯টায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মরহুম মাহবুবুর রহমানের বাড়িতে আঁখি ও নবজাতকের মরদেহ আনা হলে শোকাবহ পরিবেশের তৈরি হয়। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। নিহত আঁখি ও তার শিশু সন্তানকে এক নজর দেখার জন্য আত্মীয় স্বজন ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে শত শত নারী পুরুষ ওই বাড়িতে ভীড় জমান। এদিকে রাত সাড়ে ১০টায় জানাজা নামাজ শেষে তাদের দাফন করা হয়। জানাজার নামাজে আগে বক্তব্য রাখেন তার জেঠা শফিকুর রহমান ও তার স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন।
জানা যায়, ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী আঁখি অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তানের জন্ম দেয়ার আশায় গিয়েছিলেন ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে। কিন্তু ভুল চিকিৎসায় সদ্যোজাত সন্তান মারা যাওয়ার সাত দিনের মাথায় মৃত্যু হয় মা মাহবুবা রহমান আঁখির। রোববার (১৮ জুন) রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে দুপুর ২টার পর তার মৃত্যু হয়।
কুমিল্লার মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত ৯ জুন সি-সেকশন সার্জারির সময় নবজাতকের মৃত্যু হয় এবং মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এরপর আঁখি ১১ জুন থেকে বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা ও মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে গত ১৪ জুন ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন।