চট্টগ্রাম, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফাঁকা পড়ে আছে ‘বাখরপুর গুচ্ছ গ্রামের’ ৪০ ঘর, দখলে দালালচক্র

প্রকাশ: ৮ মে, ২০২৩ ১০:৪২ : পূর্বাহ্ণ

চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় ‘বাখরপুর গুচ্ছ গ্রাম’ নামে প্রকল্পের ৫০টি ঘরের মধ্যে ৪০টিই ফাঁকা পড়ে আছে। আর এই সুযোগে অসহায় লোকদের কাছ থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় সংঘবদ্ধ একটি দালালচক্র।

তাদের নামে ঘর আছে বলে, স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ এ দালালচক্রের বিরুদ্ধে। এদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে, প্রথম প্রকাশিত তালিকায়  ৯ জনকে ঘর দেয়া হলেও তারা ওইসব ঘরে উঠেননি।

৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০টি পরিবার ঘরে বসবাস করলেও ফাঁকা পড়ে আছে ৪০টি। সম্প্রতি ওই গুচ্ছগ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ১ থেকে ৯ নম্বর পর্যন্ত ঘর ফাঁকা পড়ে আছে।

 

 

বাকি ঘরগুলোর মধ্যে ১০টি পরিবার বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছে এবং কয়েকটি ঘর তালাবদ্ধ। আবার কয়েকটি ঘরে বহিরাগতদের থাকতে দেখা গেছে।

গুচ্ছগ্রামের এমন হাল হওয়ার কারণ জানিয়েছেন সেখানের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানে সচ্ছল ব্যক্তির নামেও ঘর বরাদ্দ হয়েছে। তারা এসব ঘরে ওঠেননি। তাই অনেক ঘরই এখনও ফাঁকা।

তিনি আরও জানান, এই সুযোগে স্থানীয় বাসিন্দা মনা শেখ, খলিল গাজী, সাদ্দাম, কালু মাস্টার ও পগু গাজী বেশ কয়েকটি ঘর তাদের দখলে রেখেছেন। এই চক্রটি অসহায়দের আশ্বাস দিচ্ছেন, যারা টাকা দেবেন তাদের এসব ঘর দিয়ে দেবেন।

 

 

তাজুল ইসলাম আরও অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ইমাম হোসেন ঘর বরাদ্দের পর বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে ২ হাজার থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য চান্দ্রা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ইমাম হোসেনকে তার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন নম্বরে কল দেয়া হয়। তিনি ব্যাংকে আছেন পরে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

 

 

এদিকে একইরকম অভিযোগ প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে গুচ্ছগ্রামের একটি ঘরে থাকা আমেনা বেগমের (৩৫)। তিনি জানান, স্থানীয় লোকজন যাদের ঘর বাড়ি আছে, ছেলে সন্তান বিদেশে থাকে এমন টাকা-পয়সাওয়ালা লোকদের নামেও ঘর বরাদ্দ রয়েছে এই গ্রামে। তদন্ত করলে এই পাওয়া যাবে।

 

 

এদিকে ১০-২০ হাজার টাকা দিলে একটি ঘর পাওয়া যাবে বলে দালালরা বলছেন, এমন কথা শোনা গেল ওই এলাকার গৃহহীন খুকি বেগমের মুখে। তিনি বলেন, এখানে সচ্ছল ব্যক্তির নামেও ঘর বরাদ্দ হয়েছে। তারা এসব ঘরে ওঠেননি। তাই অনেক ঘরই এখনও ফাঁকা।

তিনি অভিযোগ করেন, ঘর দেবে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে মেহেদী আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘর পাইনি।

 

 

এদিকে ‘বাখরপুর গুচ্ছ গ্রামে’ ১০টি ঘর পাবেন বলে দাবি করেছেন সেখানের বাসিন্দা নবু গাজী। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, মেঘনায় ভেঙে মাত্র দুই বছর পরেই জায়গাটি ভেসে উঠে। সেখানে সরকারিভাবে গুচ্ছগ্রাম তৈরি হয়। কিন্তু এসব জমির প্রকৃত মালিক কলিম গাজীর বংশধর কামরুল, নজরুল ও আমিনুল ইসলাম। তাদের পক্ষে আমি মামলা করলে আদালত আমাকে ১০টি ঘর দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। এখনো সেসব ঘর উপজেলা থেকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।

 

 

এসব অভিযোগের বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা শাহনাজ বলেন, আমি এই উপজেলায় যোগদানের আগে গুচ্ছগ্রামের ৭০ শতাংশ কাজ হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে যে তালিকা দেয়া হয়েছে ওই তালিকার মধ্যে প্রথমে ৯ জনকে ৯টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু তারা ওই ঘরগুলোতে ওঠেননি এবং উঠবেন না বলে জানিয়েছেন। এখন আমরা ওই ঘরগুলো নতুন করে বরাদ্দ দেব।

 

 

দালাল সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে এক ব্যক্তির নামে একাধিক ঘর দেয়ার বিধান নেই। যাদের নাম বলা হয়েছে, তাদেরকে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ডেকে আনা হবে। সার্বিক বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন খোঁজ খবর নেবে। আর যারা জমির মালিক তাদেরকে আদালত ১০টি ঘর দেয়ার নির্দেশ দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন এই কর্মকর্তা।

 

 

চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রফিকুল ইসলামের দেয়া তথ্য মতে, জেগে ওঠা চরে সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ‘বাখরপুর গুচ্ছ গ্রাম’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পের মাটি কাটার কাজ আমরা করেছি। প্রথম মাটি কাটার পর বর্ষায় চলে যায়। পরবর্তীতে থাকার উপযোগী করার জন্য দ্বিতীয়বার মাটি কাটা হয়। আর ৫০টি ঘর নির্মাণ করতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৭৫ লাখ টাকা।

 

 

সূত্র – চ্যানেল২৪

Print Friendly and PDF