প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ ৩:৫৮ : অপরাহ্ণ
কনের বাড়িতে বর হাজির। বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা প্রায় শেষ। বিয়ে বাড়ির উঠানে টানানো হল একটি বড় দাঁড়িপাল্লা। যার এক পাল্লায় তুলে দেয়া হল বিয়ের পোশাক পরিহিত কনেকে। অন্য পাল্লায় রাখা হল কয়েন (টাকা)। পরে কনের ওজনের সমপরিমাণ কয়েন দিয়ে মাপা হল তাকে।
এমনি এক অভিনব বিয়ে অনুষ্ঠিত হল কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের প্রাগপুর মাঠপাড়া গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রাগপুর মাঠপাড়া গ্রামের রতন আলীর মেয়ে মাছুরা খাতুন রিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় একই গ্রামের মাইনুল ইসলামের ছেলে বিপ্লবের। বিয়ের উদ্দেশ্যে তারা দু’জনে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের বিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে মেয়ে ও ছেলে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে আসে। শুরু হয় বিয়ের দিনক্ষণসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা।
গত মঙ্গলবার তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিয়ে বাড়িতে সকলের উপস্থিতিতে মেয়ের বাবা দাড়ি পাল্লায় মেপে কনের সমপরিমাণ কয়েন (টাকা) দিয়ে ছেলেকে উপঢৌকন দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাড়ি পাল্লায় মেপে টাকা দেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজনের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়া। মেয়ের পরিবার থেকে বিষয়টিকে মানত হিসেবে বলা হলেও অনেকে বিষয়টিকে যৌতুক হিসেবে দেখেছেন। তবে নানা ভাবে চেষ্টা করেও ছেলে ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হলেও প্রকাশ্যে জনসম্মুখে এভাবে ওজন করে টাকা দেয়া ঠিক হয়নি। এটি যৌতুক না মানত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় মানুষের মাঝে নানা প্রশ্নের জন্ম দিবে।
মেয়ের বাবা রতন আলী বলেন, ছেলে-মেয়ে নিজেরা সম্পর্ক করে কিছুদিন আগে বিয়ে করে। গত মঙ্গলবার উভয় পরিবারের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ের স্বীকৃতি দেয়া হয়। মেয়ের ওজনে টাকা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মেয়ের জন্মের সময় মানত করা হয়েছিল। মেয়ে বেঁচে থাকলে বিয়েতে তার ওজনের সমপরিমাণ টাকা উপঢৌকন দেব। তাই ওই মেয়েকে দাড়ি পাল্লায় মেপে কয়েন দেয়া হয়েছে।
প্রাগপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মেয়ের বাবা রতন আলী একজন গার্মেন্টসকর্মী। ঈদে ছুটিতে এসে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। দাড়ি পাল্লায় মেপে টাকা দেয়ার ঘটনা এলাকাজুড়ে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুল মাষ্টার বলেন, এ ধরনের ঘটনার খবর শুনেছি। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাকেও দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আমি সেখানে যায়নি। তবে কেন মেয়ের সমপরিমাণ টাকা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তবে দাঁড়িপাল্লায় মেপে টাকা দেয়ার বিষয়টি অন্যায় হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা আইনগত অপরাধ। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র – চ্যানেল২৪