চট্টগ্রাম, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানে মৃত্যু হলে কি কবরের আজাব মাফ হয়?

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ২:০৬ : অপরাহ্ণ

পবিত্র রমজান মাসে মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা ফরজ। কোরআনুল কারিমের ভাষ্য মোতাবেক এ রাতের ইবাদত হাজার মাস ইবাদত থেকেও উত্তম। এ মাসেই মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন পবিত্র কোরআন। মহিমান্বিত শবে কদরও এ মাসেই।

রমজানের শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান মাস যখন আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানের পায়ে বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বোখারি : ১৮৯৯)।

রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত এত বরকতময় ও সৌভাগ্যময় যে, বাকী এগারো মাস মিলেও এর সমান হবে না। শয়তানকে শৃঙ্খলিত করায় ইবাদত করাও খুব সহজ। বলা হয়ে থাকে, এ মাসে কেউ মারা গেলেও সে সৌভাগ্যবান। অনেকেই আবার বলেন, রমজানে কেউ মারা গেলে তার কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়। এ কথাটি কতটুকু সত্য?

এ ব্যাপারে কোনও কোনও গবেষকের বক্তব্য হলো, রমজানে মৃত্যুর বিশেষ কোনও ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। পুরো রমজান রোজা রেখে কেউ মারা গেলে তার ব্যাপারে ফজিলতের কথা এসেছে- এটাতো তার কর্মের কারণে। রমজানের কারণে নয়। ঈমান-আমল হলো মানুষের মর্যাদার মূল বিষয়। ঈমান-আমল ছাড়া শুধু রমজানে মারা গেলে তার এ ফজিলত লাভ হতে পারে না। অবশ্য কেউ কেউ নিম্নোক্ত হাদিসটির মাধ্যমে বিষয়টি প্রমাণ করতে চেয়েছেন।

হাদিসটি হচ্ছে-

“আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজন প্রবেশ করে— জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৭৭; মুসলিম, হাদিস : ১০৭৯)”

একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, উপর্যুক্ত হাদিসের কোথাও কি বলা হয়েছে, রমজানে মৃত্যুবরণ করলে কবরের আজাব মাফ হয়ে যাবে। তবে এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, এ মাসে মৃত্যুবরণ করাটা সৌভাগ্যের নিদর্শন। কোনও ব্যক্তি নেক আমল নিয়ে এ মাসে ইন্তেকাল করতে পারলে এটা তার জন্য অতিরিক্ত মর্যাদার কারণ হবে।

 

 

মূলকথা হলো, যে ব্যক্তি ঈমান ও আমল নিয়ে কবরে যাবে সে দিনে কিংবা যে মাসেই মৃত্যুবরণ করুক সফলতা তাকে স্পর্শ করবে। পরকালে মুক্তির জন্য ঈমান ও যথানিয়মে আমল একান্ত জরুরি। পরপারে নাজাতের জন্য আমলের মাধ্যমে কঠোর সাধনা করার বিকল্প নেই। রমজান মাসে মৃত্যুবরণ করলে কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়, এটি সরাসরি কুরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কথা নয়। সুতরাং এমন কথা প্রচার না করাই কাম্য।

 

 

একজন মানুষের জান্নাতে যাওয়া না যাওয়া, কবরের আজাব হওয়া না হওয়া- এসব নির্ভর করে তার ব্যক্তিগত আমলের ওপর। অতএব, কেউ যদি রমজান মাসে সঠিক পন্থায় রোজা পালন করে এবং ওই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তা হলে আশা করা যায়, আল্লাহ তার কবরের আজাব ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জান্নাতবাসী করবেন। কেননা হাদিসে এসেছে- ‘বান্দার শেষ আমলই বিবেচনা যোগ্য।’

Print Friendly and PDF