চট্টগ্রাম, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মায়ের চেয়ে ১৪ বছরের বড় ছেলে সাত্তার!

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ১২:২৭ : অপরাহ্ণ

কলেজ পড়ুয়া আব্দুস সাত্তারের বয়স ৭০ বছর। তিনি তার বাবার থেকে ৪ বছর আর মায়ের থেকে ১৪ বছরের বড়। এমনই এক অদ্ভুত বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন সাত্তার। জন্ম নিবন্ধনে এমন ভুল তথ্য লিপিবদ্ধ হওয়ায় ভোটার হতে পারছেন না তিনি। সব ধরনের কাজে গিয়ে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। আর জন্ম নিবন্ধনে সংশোধনী করতে গিয়েও হয়রানী হতে হচ্ছে তাকে।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পুন্ডুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আজমত আলীর ছেলে আব্দুস সাত্তার। তার মায়ের নাম ফুলমতি খাতুন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদন করে দীর্ঘদিন ঘুরেও কোনো সমাধান মিলছে না। কলেজ পড়ুয়া আব্দুস সাত্তার তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আছেন দুশ্চিন্তায়।

জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবা মো. আজমত আলীর জন্ম তারিখ লিপিবদ্ধ আছে ১৯৫৭ সালের ৮ জানুয়ারি এবং মায়ের জন্ম তারিখ ১৯৬৭ সালের ০৩ ফেব্রুয়ারি। আর তাদের ছেলে আব্দুস সাত্তারের জন্ম নিবন্ধনে জন্ম তারিখ লিপিবদ্ধ হয়েছে ১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর। সে হিসেবে তার বর্তমান বয়স ৭০ বছরের বেশি। আর পিতার চেয়ে ৪ বছরের বড় এবং মায়ের চেয়ে ১৪ বছরের বড় আব্দুস সাত্তার। অথচ প্রকৃতপক্ষে আব্দুস সাত্তারের জেএসসি, এসএসসি, ও এইচএসসি সমমানের শিক্ষা সনদে বয়স রয়েছে ১৬ ডিসেম্বর ২০০৪। সে হিসেবে তার বর্তমান বয়স ১৮ বছর।

 

 

আলাপকালে আব্দুস সাত্তার জানান, ‘গতবছর এলাকায় ভোটার তথ্য সংগ্রহকারীরা তথ্য সংগ্রহ করতে এলে ভোটার হওয়ার জন্য আমার কাছে থাকা সব কাগজপত্র জমা দেই তাদের কাছে। যেদিন সবাইকে ভোটারের ছবি তোলার জন্য ডাকা হয় সেদিন ছবি উঠার জন্য গেলে আমারটা বাতিল করা হয় এবং বয়স সংশোধন করে পুনঃরায় আবেদন করতে বলেন।’

 

 

তিনি বলেন, ‘এই ভুল সংশোধন করতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে আমাকে। নানা কাগজপত্র জমা দেয়ার বেড়াজালে বয়সটা কোনভাবেই সংশোধন করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে আমার বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করলে তারা আমার সঙ্গে নানাভাবে ঠাট্টা করছে। সব মিলিয়ে ভবিষ্যতে চাকরি করাসহ সব ধরনের কাজে সুফল পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।’

 

 

করমজা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আব্দুল মতিন জানান, জন্ম নিবন্ধনের এরকম জটিলতা বহু মানুষের রয়েছে। বহু সংশোধন করা হয়েছে। তবে বর্তমানে সার্ভার থেকে বয়স সংশোধনের অপশনটাই তুলে দিয়েছে, যে কারণে এখন আর বয়স সংশোধন করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার যদি সার্ভারে বয়স সংশোধনের অপশন আসে সংশোধন করা যাবে বলে জানান।

 

 

করমজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী বাগচী বলেন, এমন ভুল নতুন নয়। এ চিত্র শুধু পাবনার নয়, সারাদেশের। অনেক মানুষ এমন পরিস্থিতির শিকার। বিষয়টি আমাদের হাতে নয়। অনলাইনে সার্ভার বয়স সংশোধনের সুযোগ আসলে ছেলেটার কাজটা করা সম্ভব হবে। তা না হলে আমাদের কিছুই করার নেই। তারপরও বিষয়টি ইউএনও স্যারকে আমরা জানিয়েছি।

 

 

এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি ওই ছেলেকে ডেকে তার সব কাগজপত্র দেখেছি। তবে তার জন্ম সনদে আর শিক্ষাগত সনদে দুই রকম বয়স রয়েছে। এটি সংশোধন করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে তার বয়স সংশোধন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

 

সূত্র – চ্যানেল২৪

Print Friendly and PDF