প্রকাশ: ৩ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:০১ : পূর্বাহ্ণ
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘রমজানের প্রথম দশক হলো রহমতের, মধ্য দশক হলো মাগফিরাতের, শেষ দশক হলো নাজাতের।’ এই তিন ভাগে বিভক্ত রমজানের মধ্যভাগ মাগফেরাতের আজ প্রথম দিন।
সাধারণত বলা হয়ে থাকে প্রথম দশকে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি রহমত বা দয়া বর্ষণ করতে থাকবেন। দ্বিতীয় দশকে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের ক্ষমা করতে থাকবেন। তৃতীয় দশকে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জাহান্নাম থেকে নাজাত বা মুক্তি দিতে থাকবেন।
পরম রবের প্রতি আত্মসমর্পিত ও আত্মনিবেদিত বান্দার জন্য সর্বাগ্রগণ্য আরাধ্য বিষয় হলো মাগফেরাত বা ক্ষমা। মাগফেরাতের পূর্বশর্ত হলো ইবাদত। আজ থেকেই মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা লাভে রোনাজারি, কান্না-কাটি করবে।
‘খুলিকাল ইনসানা জায়িফাহ’– আল্লাহপাকের এ ঘোষণা অনুযায়ী মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দুর্বল প্রজাতির মানুষের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য হলো অপরাধ করা, পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়া; আর সেটি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, ছোট কিংবা বড় গুনাহর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা।
অন্যদিকে মহান স্রষ্টার অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো বান্দাকে ক্ষমা করা, মাফ করে দেওয়া। তবে এ জন্য বান্দাকে অনুশোচনায় আচ্ছন্ন হতে হয়, তওবার শর্তাদি পরিপালনের মাধ্যমে পরম রবের কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বীয় মস্তক অবনত করতে হয়। অপরাধের বিষয়ে লজ্জিত হওয়া, যাবতীয় পাপাচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা আর ভবিষ্যতে কখনও পাপাচারে লিপ্ত না হওয়ার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়াই তওবা কবুলের পূর্বশর্ত।
এ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন তওবার মাধ্যমে বান্দাকে নিষ্পাপ-নিষ্কলুষ ঘোষণা করা হয়; ‘আত্তায়িবু মিনাজ্জানবি কামাল্লা জান্বা লাহু’, অর্থাৎ পাপাচার থেকে তওবাকারী এমন হয়ে যায় যে সে কোনো পাপই করেনি। পবিত্র রমজানে রোজাদার বান্দাকে সিয়াম সাধনার এ অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদত ঘনিষ্ঠতার দিক থেকে মহান আল্লাহর অতীব নিকটবর্তী করে দেয়; যে সুযোগে বান্দা কায়মনবাক্যে সম্পন্ন ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে পরম সত্তার পক্ষ থেকে মাগফেরাতের নেয়ামত লাভে ধন্য হতে পারে। রমজানের চলমান এই মধ্য দশক হচ্ছে সেই উপযুক্ত সময়, যখন মহান আল্লাহ তার বান্দাদের ক্ষমা করার ওসিলা খোঁজেন।
সুতরাং এই ১০ দিন আমাদের করণীয় হবে আল্লাহ পাকের ক্ষমা-সংক্রান্ত নামগুলোর জ্ঞান হৃদয়ঙ্গম করে এর ভাব-প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য অর্জন ও অধিকার করে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করার চেষ্টা করা এবং আজীবন তার ধারক-বাহক হয়ে তা দান করা বা বিতরণ করা তথা আল্লাহর গুণাবলি নিজের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির কাছে পৌঁছে দেওয়া। আল্লাহ তাআলার ক্ষমাসুলভ নামগুলো হলো আল গফিরু (ক্ষমাশীল), আল গফুরু (ক্ষমাময়), আল গফফারু (সর্বাধিক ক্ষমাকারী), আল আফুউ (মার্জনাকারী), আল খফিদু (বিনয় পছন্দকারী); আশ শাকুরু (কৃতজ্ঞ), আল বাররু (সদাচারী), আল হালিমু (সহিষ্ণু), আস সবুরু (ধৈর্যশীল), আত তাউওয়াবু (তওবা কবুলকারী) ইত্যাদি।
হাদিস শরিফে আছে, অপরাধ স্বীকারকারী নিরপরাধ ব্যক্তির মতো। (বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)। আপনি ক্ষমা লাভ করেছেন বা ক্ষমার অধিকারী হয়েছেন তা বোঝা যাবে আপনার আচরণে যদি ক্ষমা প্রকাশিত হয়; নয়তো নয়। এতএব রমজানের দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের ১০ দিন করণীয় হলো সর্বোচ্চ ক্ষমা প্রদর্শন করা।
সূত্র – চ্যানেল২৪