চট্টগ্রাম, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মা সেতুতে লাইন স্থাপন শেষ, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে ৪ এপ্রিল

প্রকাশ: ৩০ মার্চ, ২০২৩ ১০:৪২ : পূর্বাহ্ণ

সড়ক পথের পর এবার সবশেষ স্লিপার বসানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পদ্মা সেতুর ওপর দেশের প্রথম আধুনিক পাথর বিহীন (ব্রাসলেস) রেলপথ নির্মাণ কাজ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এই রেলপথ এক সুতোয় যুক্ত করেছে পদ্মার দুই প্রান্ত মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরাকে।

ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে আগামী ৪ এপ্রিল সেতুর ওপর পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা প্রকৌশলীদের। এতে সৃষ্টি হচ্ছে দেশের বৃহত্তর রেল যোগাযোগের নেটওয়ার্ক। যা রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করবে যশোর-বেনাপোলসহ পায়রা ও মংলা বন্দরকে। রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে যোগাযোগের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করবে নতুন এই রেলপথ। এছাড়াও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের সব কাজ শেষ হওয়া নিয়ে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

মূল সেতুর ২৫ নাম্বার পিয়ারের ওপর থাকা ৫ নং মুভমেন্ট জয়েন্টের ওপর গতকাল বুধবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়েছে সবশেষ স্লিপার বসানোর কার্যক্রম। ৭ মিটার এ স্লিপার ঢালাইয়ের মধ্য দিয়ে সড়ক পথের পর এবার সেতুতে নির্মিত রেলপথ প্রমত্তা পদ্মার বুকে দুটি প্রান্তকে যুক্ত করেছে এক সুতোতে। শতভাগ দৃশ্যমান হয়েছে মূল সেতুর সমপরিমাণ ৬.১৫ কিলোমিটার রেলপথ। যার ওপর দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১২০ মাইল গতি বেগে ছুটবে দ্রুতগতির সব ট্রেন।

 

 

 

 

তবে প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪১ কিলোমিটার রেল পথ চালু করতে সব কাজ শতভাগ সম্পন্ন হতে আরও ৬ মাস সময় লাগবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন।

আর রেলপথের মতো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ হবে রেল স্টেশনগুলোর নির্মাণ কাজ। পাশাপাশি আগামী ৪ এপ্রিল সেতুতে পরীক্ষামূলক রেল চলাচলের কথা জানিয়েছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ।

 

তিনি বলেন, আগেই শেষ হয়েছে পদ্মা সেতুর সড়কপথের কাজ এরপর গত বছরের ২৫ জুন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে ২৬ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় সেতুটি। এবার সেতুর নিচ তলার রেলপথের কাজ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হচ্ছে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পদ্মা সেতুর দীর্ঘ ৮ বছরের বিশাল কর্মযজ্ঞ।

 

নির্মাণ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-যশোর ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ শেষে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ যেমন সহজ হবে তেমনি পাল্টে যাবে অর্থনৈতিক দৃশ্যপট।

 

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতু ও দুইপাশের ভায়াডাক্ট সেতু মিলিয়ে পদ্মা রেল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। মূল সেতুতে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপিত হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের ৮টি স্লিপার ছাড়া বাকিগুলো কংক্রিটের তৈরি। সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টের (সিএসসি) তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এ রেলসংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। পদ্মা সেতু ছাড়াও প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার পাথরবিহীন রেললাইন আর বাকিটা ব্ল্যাস্টেট রেললাইন ফলে শেষ স্লিপার ঢালাইরে মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে।

 

 

এছাড়াও রেল সংযোগের ঢাকা থেকে মাওয়া কাজের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। এবং মাওয়া থেকে ভাঙ্গা এ অংশের কাজের অগ্রগতি সব চেয়ে বেশি। এখানে কাজের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। আর ভাঙ্গা থেকে যশোর এ অংশের অগ্রগতি প্রায় ৬৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনে সম্পন্ন হবে সব কাজ।

 

সূত্র – চ্যানেল২৪

Print Friendly and PDF