প্রকাশ: ২৭ মার্চ, ২০২৩ ২:৩৩ : অপরাহ্ণ
স্বাধীনতার মাসেই আরেকটি স্বপ্নজয়ের দ্বারপ্রান্তে পদ্মা সেতু। পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণযজ্ঞে বসাতে বাকি আর মাত্র একটি স্লিপার। মাত্র ৭ মিটারের স্লিপারটি সফলভাবে বসে গেলে শতভাগ সম্পন্ন হবে মূল সেতুতে পাথরবিহীন রেললাইন স্থাপনের কাজ।
তবে এই অংশটুকু ঢালাই করা হয়নি একটি স্লিপারের অভাবে। সেতুর মাঝামাঝি ৫ নম্বর মুভমেন্ট জয়েন্টের একটি স্টিলের স্লিপার নিয়ে নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
দায়িত্বশীল প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জরুরি ভিত্তিতে বিমানে করে এই স্লিপারটি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে, আশা করি খুব শীঘ্রই দ্রুত এটি এসে পৌঁছাবে।
সোমবার (২৭ মার্চ) সকালে তিনি জানান, স্লিপারটির ছিদ্র ডিজাইন অনুযায়ী মিলছে না। সূক্ষ্ম এই রেল লাইন নিখুঁতভাবে নির্মাণ একেবারে শেষ পর্যায়ে। কিন্তু শেষ মুভমেন্ট জয়েন্টের বিশেষ এই স্লিপারটি যথাযথ না হওয়ায় বিলম্ব করতে হচ্ছে।
৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা রেল সেতুতে মোট ৮টি এমন মুভমেন্ট জয়েন্ট রয়েছে। এর ৭টি যথাযথভাবে স্থাপন হয়েছে সফলভাবে। বাকি জয়েন্টও স্থাপন হয়েছে তবে রেল লাইন ঢালাই করার জন্য ও শতভাগ কাজ সম্পন্ন করার জন্য এই স্লিপারে বিকল্প নেই।
প্রকৌশলীরা জানান, মূল সেতুতে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপন হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের স্টিলের স্লিপারগুলো ছাড়া বাকি কংক্রিটের সব স্লিপার চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফরিদপুরের ভাঙ্গা পুরনো রেল স্টেশনের পাশে স্লিপার ফ্যাক্টরি স্থাপন করে সেখানেই তৈরি করেছে এই স্লিপার। শুধু সেতুর স্লিপারই নয় পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ১৭২ কিলোমিটার রেল লাইন তৈরি জন্য সব স্লিপার তৈরি করেছে এখানে। তবে বিশেষ তাপমাত্রায় মুভমেন্ট জয়েন্ট এবং স্টিলের স্লিপারগুলো তৈরি করে আনা হয় চীন থেকে।
স্লিপারটি পৌঁছালে গতকাল ২৬ মার্চ বাকি অংশের কংক্রিটিং হওয়ার কথা ছিল। ৭২ ঘণ্টা কিউরিংয়ের জন্য অপেক্ষার পর আগামী ৩০ মার্চ মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে পরীক্ষামূলক রেল চলবে ভাঙা পর্যন্ত। এই রেলে ছড়বেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। এর মধ্য দিয়ে স্বপ্ন জয়ের আরেকটি তার প্রান্তে পৌঁছে যাবে পদ্মা সেতু।
রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতুতে যানবাহন চালু রেখেই নিচ তলায় সুক্ষ্মভাবে টেকসই পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ করা। এটি এখন সফলভাবে সম্পূর্ণ হওয়ার পথে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ বিগ্রেডিয়ার সাঈদ আহমেদ বলেন, পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণ একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। আবার সেই সেতুতে রেল সংযোগ করা আরেকটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। যে কোন জিনিস তৈরির সময় যেটা টেবিলে করা হয় সেটা যখন বাস্তবে অবগ্রাউন্ডে করা হয় তখন সেটা সেরকমভাবে হয়ে ওঠে না। সেটার জন্য আমাদের প্রথমদিকে কিছুটা সমস্যা ছিল। যেটা আমরা সংশোধন করেছি। এখানে আমরা সবোর্চ্চ মান নিশ্চিত করেছি। কংক্রিট আনার আগে, প্রেসিং করার সময় প্রতিটা সময় আমরা প্রতিটা বিষয় আমরা টেস্ট করছি, তারপর সেটা ব্যবহার করছি। পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯৯ শতাংশ আর মাত্র এক দিনের মধ্যেই শতভাগ কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হবে।
বাকি থাকা মাত্র ৭ মিটার কাজ ছাড়া দুই প্রান্ত থেকে পুরো সেতুতে রেলপথ তৈরি। মজবুত এই রেল লাইন দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে পদ্মা সেতুর রেল রুটটিও। প্রস্তাবিত রুটটি পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতকে সংযুক্ত করে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-টঙ্গী-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-দোহাজারি- মিয়ানমারের গুণদুম সীমান্তে গিয়ে মিশবে।
তাই পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচলে নতুন এক অধ্যায় রচনা হতে এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে এই নতুন রেল নেটওয়ার্ক। দক্ষিণের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাতও সহজ হবে। আর এই রেল নেটওয়ার্ক পায়রা বন্দরের সাথেও যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে যা খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্র – চ্যানেল২৪