চট্টগ্রাম, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদী আল্লাহর বড় নেয়ামত

প্রকাশ: ১৫ মার্চ, ২০২৩ ১২:৩৯ : অপরাহ্ণ

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার অপূর্ব সৃষ্টিসমূহের মধ্যে নদী অন্যতম। পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগের একটি ক্ষেত্র নদনদী। শুধু পৃথিবীতে নয়, জান্নাতেও প্রবাহমান নদীর সৌন্দর্য অনুভব করা যাবে- যা কোরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা প্রমাণিত।

> নদীর বৈশিষ্ট্য উদারতা: নদী নিজেকে আল্লাহ তাআলার সমুদয় সৃষ্টির জন্য বিলিয়ে দেয়। নদী-সাগরের তলদেশে হিরা-মুক্তোর অবস্থান। এ ছাড়াও মাছসহ বহু হালাল প্রাণীর বাসস্হান নদী। মানবজাতির ব্যবহারের পথে এসব নেয়ামত কখনো বাধা হয় না। নদী নিজের গর্ভে ধারণকৃত পানি মানবজাতির কল্যাণে উৎসর্গ করে। এটাই তার উদারনীতি। তার বুকের ওপর দিয়ে টাইটানিকের মতো বিশাল বিশাল জাহাজ-স্টিমার চলতে সুযোগ করে দেয়। জেলেদের বারবার জাল দিয়ে মাছ কুড়িয়ে নেয়ার মধ্যে ক্লান্তবোধ করে না। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির পানি গেলে বন্যাকবলিত মানুষকে কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়। এভাবে প্রাণহীন নদী-সাগর নিজের উদারতার পরিচয় দেয়।

কোরআনে নদীর নান্দনিক দৃশ্যের কথা: নদীর কথা পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে উচ্চারিত হয়েছে। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন-

مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ
তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন।

يْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ
উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?

يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ
উভয় দরিয়া থেকে উৎপন্ন হয় মোতি ও প্রবাল।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?

وَلَهُ الْجَوَارِ الْمُنشَآتُ فِي الْبَحْرِ كَالْأَعْلَامِ
দরিয়ায় বিচরণশীল পর্বতদৃশ্য জাহাজসমূহ তাঁরই (নিয়ন্ত্রনাধীন)

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? (সূরা: আর রাহমান, আয়াত: ১৯-২৫)

দুনিয়ার চারটি নদীর উৎস জান্নাতে: নদীর অস্তিত্ব শুধু দুনিয়াতে নয়, বরং আখেরাতেও এর অস্তিত্ব রয়েছে। যা কোরআন-হাদিসের একাধিক বাণী দ্বারা প্রমাণিত। নদীকে প্রকৃতি ও পরিবেশের ধারাবাহিকতার সৃষ্টি বলে সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে হবে না। কারণ, নদী ও সাগরের এ বিশাল আবদ্ধ পানিকে সংরক্ষণ করছেন একমাত্র আল্লাহ। পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ হচ্ছে স্থলভূমি আর বাকি তিন অংশ পানি। এ পৃথিবী নামের পানিজগতে মানবজাতিসহ সব সৃষ্টিকে টিকিয়ে রাখছেন শুধু এক আল্লাহই। পৃথিবীর মানচিত্রে অবস্থিত চারটি নদীর মূল উৎস জান্নাত। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘দুনিয়াতে কয়েকটি নদী আছে, যেগুলো জান্নাতেরও নদী বটে। সেগুলো হলো- সাইহান, জাইহান, ফুরাত ও নীল। (সহিহ মুসলিম : ৭৩৪০) আরো বলেন, ‘সিদরাতুল মুন্তাহার গোড়া থেকে জান্নাতের চারটি নদী প্রবাহিত হবে। সেগুলো হচ্ছে নীল, ফুরাত, সাইহান ও জাইহান।’ (প্রাগুক্ত)

জান্নাত নদী দ্বারা সজ্জিত: জান্নাতকে আল্লাহ তাআলা নদী দ্বারা সজ্জিত করেছেন। নদী জান্নাতের সৌন্দর্য রক্ষার এক মনোহর উপকরণ। এ জান্নাত মুমিন বান্দারা সৎ আমলের বিনিময় স্বরূপ পাবেন। আল্লাহ বিচিত্র নদনদী দ্বারা জান্নাতকে সাজিয়েছেন। এতে পানির নদী, দুধের নদী, সুরার নদী ও মধুর নদী রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন- مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِّن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى ۖ وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ ۖ كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِي النَّارِ وَسُقُوا مَاءً حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ

অর্থ: ‘পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেওয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেজগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে? (সূরা: মুহাম্মদ, আয়াত : ১৫ )

নদীতে মানবজাতির বহু নেয়ামত নিহিত: নদী-সাগরকে কেন্দ্র মানুষেরা খাদ্যোৎপাদন, মাছ শিকার, পণ্য পরিবহণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন- إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِن مَّاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

‘নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে যে পানি নাজিল করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত জমিনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তারই হুকুমের অধীনে আসমান ও জমিনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৬৪)

রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُ مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِلسَّيَّارَةِ ۖ وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ

অর্থ: ‘তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সুমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে এবং তোমাদের এহরামকারীদের জন্যে হারাম করা হয়েছে স্থল শিকার যতক্ষণ এহরাম অবস্থায় থাক। আল্লাহকে ভয় কর, যার কাছে তোমরা একত্রিত হবে।’ (সূরা: মায়েদা, আয়াত: ৯৬)

কেয়ামতের দিন দুনিয়ার নদী বিস্ফোরিত হবে: ভয়াবহ পরিধি ও গভীরতার নদী-সাগর, যার অভ্যন্তরে রয়েছে বিচিত্র জীবজন্তুর মহাজগৎ- কেয়ামতের দিন এই সাগরে বিস্ফোরণ ঘটবে এবং তা থেকে ভয়াবহ আগুন জলে উঠবে। সাগরের উত্তাল ঢেউ পৃথিবীর অস্তিত্বকে ধ্বংস করে দিবে। বিভীষিকাময় পরিস্থিতি গড়ে তুলবে। সেই সময় কেয়ামতের ভয়ঙ্কর অবস্থা আরও প্রখর আকার ধারণ করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন- وَ اِذَا الۡبِحَارُ فُجِّرَتۡ

অর্থ: ‘আর যখন সাগরকে বিস্ফোরিত করে দেওয়া হবে।’ (সূরা ইনফিতার, আয়াত : ৩)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- وَ اِذَا الۡبِحَارُ سُجِّرَتۡ

‘এবং যখন সাগরসমূহকে উত্তাল করে তোলা হবে।’ (সূরা তাকভির, আয়াত : ৬)

Print Friendly and PDF