প্রকাশ: ২১ নভেম্বর, ২০২২ ৩:০৬ : অপরাহ্ণ
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নজর কাড়েন এবারে শুভেচ্ছাদূত ২০ বছর বয়সী ঘানিম আল-মিফতাহ। কাতারি তরুণ তারকা ঘানিম আল-মিফতাহ ও মার্কিন অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যানের সংলাপের মাধ্যমে রোববার (২০ নভেম্বর) উদ্বোধন হয়েছে এবারের ফিফা বিশ্বকাপ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সৌহার্দ ও সম্প্রীতির বার্ত দিয়ে ফ্রিম্যান ঘানিমকে জিজ্ঞাসা করেন ‘আমরা সবাই একটি তাবুর নিচে একত্রিত হয়েছি। কীভাবে অনেক দেশ, ভাষা ও সংস্কৃতি একত্রিত হতে পারে যদি শধুমাত্র একটি পথকে গ্রহণ করা হয়?
ফ্রিম্যানের উত্তর পবিত্র কুরআনে সাড়ে চৌদ্দ’শ আগে দিয়েছেন বিশ্ব জাহানের রব। পবিত্র কুরআনের ৪৯ নম্বর সুরার ১৩ নম্বর আয়াতে ফ্রিম্যানের প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। আর সেই কথাই বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরলেন ঘানিম।
ঘানিম পবিত্র কুরআনের সুরা হুজরাতের ১৩ নং আয়াতে পাঠ করেন। যার বাংলা অর্থ হচ্ছে, ‘হে মানুষ, আমি তোমাকে সৃষ্টি করেছি নারী ও পুরুষ থেকে, আমি তোমাকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর মধ্যে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা পরষ্পরকে চিনতে পারো, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি সম্মানিত যে বেশি আল্লাহভীরু, আল্লাহ সব কিছু জানেন ও সব বিষয়ে অবগত।’
জন্ম থেকেই পা নেই ঘানিমের। কডাল রিগ্রেশন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত তিনি। মাতৃগর্ভে থাকার সময় আলট্রা-সাউন্ড মেশিনে ধরা পড়ে তার শরীরের অবিকশিত অংশ। চিকিৎসক তার মাকে গর্ভপাত করাতে বলেন। ঘানিমের মা-বাবা এই সিন্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। কারণ ইসলামে গর্ভপাত হলো চূড়ান্ত অপরাধ। ঘানিমের বাবা মুহাম্মদ-আল-মুফতাহ এবং মা ইমান-উল-আবদেলি তাদের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান। ২০০২ সালের ৫ মে ঘানিম আল মুফতাহর জন্ম। চিকিৎসকরা বলেছিলেন যে তার ১৫ বছরের বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। এখন ঘামিনের বয়স ২০ বছর।
ঘানিমের আহমদ আল মুফতাহ নামে জমজ ভাই রয়েছে। ছোট থেকেই পদে পদে সামাজিক বঞ্চনার শিকার হয়েছেন তিনি। তবে তিনি সব বাধাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতেন নিজ পথে, একেবারে নিজস্ব ছন্দে। বন্ধুদের বোঝাতেন-তার অসম্পূর্ণ শরীরের জন্য তিনি মোটেও দোষী নন। সৃষ্টিকর্তা তাকে যে পরিমাণ অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রদান করে পাঠিয়েছেন, এর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।
এভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন একজন মোটিভেশনাল স্পিকার ও মানবসেবী। সব প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে ঘানিম কাতারের জনপ্রিয় ইউটিউবার, একজন জনপ্রিয় মোটিভেশনাল স্পিকার ও মানবসেবী। আল মুফতাহ প্রথমবার বিশ্ববাসীর সামনে হাজির হন ২০১৮ সালে।
কোরআন তেলাওয়াতের অংশ ছাড়াও ঘানিম এবারের বিশ্বকাপে ফিফার শুভেচ্ছাদূত মনোনীত হন। ঘানিম তার পরিবারের সাহায্যে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গঠন করেছেন। তার মতো যারা পায়ে চলাচল করতে পারেন না, এ সংস্থা থেকে তাদেরকে হুইলচেয়ার উপহার দেওয়া হয়। মানবদরদী কাজের জন্য তিনি সারা পৃথিবীতেই পরিচিত। ২০১৪ সালে কুয়েতের আমি শেখ শাবাহ আল আহমদে আল শাবাহ তাকে ‘শান্তির দূত’ নামে অভিহিত করেন।
ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ঘানিম। ঘারসিয়া আইসক্রিম নামের একটি নিজস্ব কোম্পানি আছে মুফতাহর। ঘানিম ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রামে বেশ সরব থাকেন। তার রয়েছে অসংখ্য ফলোয়ার।
সূত্র: খালিজ টাইমস