চট্টগ্রাম, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪ , ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাকরিতে যোগ দিলেন দুদকের সাবেক কর্মকর্তা শরীফ

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ১১:১৫ : পূর্বাহ্ণ

বহু জল্পনা কল্পনা শেষে চাকরিতে যোগ দিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) শরীফ উদ্দিন।

চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন কোথাও চাকরি না পেয়ে ভাইয়ের দোকান সামলাচ্ছেন, এমন খবরে তাকে চাকরি দিতে এগিয়ে আসেন অনেকেই।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) শরীফ উদ্দিন জানান, ‘একটি ভেটেরিনারি মেডিসিন কোম্পানির হেড-অফ টেকনিক্যাল সার্ভিস কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন তিনি। তার বেতন ৮০ হাজার টাকার মতো বলে জানান।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স সমর্থনকারীদের প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের কল্যাণে মহান আল্লাহ আমাকে দেশ ও বিদেশের অনেক সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান তাদের সহকর্মী হিসেবে পেতে চাইছে। এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবের।’

রোহিঙ্গা এনআইডি জালিয়াতি, কক্সবাজারের বড় বড় প্রকল্পের দুর্নীতিসহ চাঞ্চল্যকর তথ্য বের করে এনেছিলেন তিনি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছিলেন। পরে রাঘববোয়ালের রোষানলে পড়ে চাকরি হারানোর গল্পটা তো সবারই জানা।

কোথাও চাকরি না পেয়ে সেই শরীফ উদ্দিন এখন চট্টগ্রাম ষোলশহর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ভাইয়ের দোকান সামলাচ্ছেন। সেই দোকানে ক্যাশিয়ার হিসেবে আছেন তিনি। মুদি দোকানদারি করে বর্তমানে সংসার চালাচ্ছেন দুদকের এক সময়ের দাপুটে কর্মকর্তা। গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশ হয় সম্প্রতি। যা সাড়া ফেলে পুরো দেশজুড়ে।

শরীফ তার মেয়াদকালে বিভিন্ন খাতে অনিয়মের খবর প্রকাশের জন্য আলোচিত হন। তিনি প্রায় সাড়ে ৩ বছর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। সে সময় এনআইডি সার্ভার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি ভোটার করার অভিযোগে ২০২১ সালের জুনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একজন পরিচালক, ৬ কর্মীসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছিলেন। এ মামলার পরপর ২০২১ সালের ১৬ জুন তাকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। পরে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের চাকরি বিধিমালা ৫৪ এর ২ ধারায় কমিশনের চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতাবলে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সে সময় বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।

শরীফকে অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার এবং ২০০৮ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি বাতিলের দাবিতে তার সহকর্মীরা দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ কমিশনের অন্যান্য দপ্তরে মানববন্ধন করেন, যা নজিরবিহীন।

এরপর চাকরি ফেরত চেয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করেন শরীফ। দুর্নীতি দমন কমিশন চাকরি বিধিমালা-২০০৮ এর ৪৮ বিধি অনুযায়ী অপসারণের আদেশ পুনঃনিরীক্ষা করে অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার করার আর্জি জানানো হয় সেখানে।

শরীফ ২০১১ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন পাস করেন। ২০১৪ সালে তিনি দুদকে যোগদান করেন।

সাড়ে সাত বছরের চাকরিজীবনের প্রথম ছয় বছরই বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) শরীফ উদ্দিনকে দুদকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ‘অতি উত্তম’ হিসেবে মূল্যায়ন করে। তাকে তদন্তকাজে ‘অভিজ্ঞ’ এবং ‘উদ্যমী ও দক্ষ কর্মকর্তা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে দুদক।

Print Friendly and PDF