চট্টগ্রাম, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে নিহত বেড়ে ১৬

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ১২:১৪ : অপরাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। এর মধ্যে কুমিল্লায় একই পরিবারের তিন জন, ভোলায় চারজন, সিরাজগঞ্জে দুজন, গোপলগঞ্জে দুই জন, পটুয়াখালী, নড়াইল, বরগুনা, শরীয়তপুর ও ঢাকায় একজন করে রয়েছেন।

কুমিল্লা

কুমিল্লায় ঝড়ো বাতাসে ঘরের ওপর গাছ পড়ে এক পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখাল পশ্চিম পাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

মৃতরা হলেন হেসাখাল পশ্চিম পাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী সাথি আক্তার ও মেয়ে লিজা আক্তার।

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান মেহবুব বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে খবর পেয়েছি, গাছ পড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ আছে। উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।

হেসাখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল বাহার বলেন, রাতে ঝড়ো বাতাসে তাদের ঘরে গাছ পড়ে। এতে ওই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।

নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘরের ওপর পড়া গাছটি সরানোর চেষ্টা করছি আমরা। সেখানে আরও কেউ চাপা পড়েছে কিনা তা দেখছি।

নড়াইল

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নড়াইলের লোহাগড়ায় ভারী বর্ষণ ও ঝোড়ো বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে মর্জিনা বেগম (৪০) নামে এক গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। মর্জিনা বেগম বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জুন বাহার গ্রামের মৃত এয়াকুব আলী শেখের মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মর্জিনা বেগম লোহাগড়া পৌরসভার রাজোপুর গ্রামের গফফার শেখের বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন। তার মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলে জিহাদকে (৮) নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থেকে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ভাড়া বাসা থেকে কাজের উদ্দেশে তিনি বের হন।

লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অদূরে পৌঁছালে ঝোড়ো বাতাসে মেহগনি গাছের ডাল ভেঙে তার মাথায় পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

লোহাগড়া থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাশ পান। এরপর স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর আলী বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। নিহতের একমাত্র সন্তান স্থানীয় মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থী। দ্রুত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সরকারিভাবে আর্থিক অনুদানসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

ভোলা

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ভোলার চরফ্যাসন, দৌলতখান, ভোলা সদর উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে ৩ জন এবং পানিতে ডুবে একজনসহ মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দৌলতখান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম খান বলেন, সন্ধ্যায় নিজ ঘরে অবস্থান করেছিলেন বিবি খাদিজা। ঝড়ো বাতাসে হঠাৎ একটা বড় গাছ এসে ঘরের চালে পড়ে। এতে চাপা পড়ে খাদিজা আহত হন। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান বলেন, মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন মনির। এ সময় বাতাসে একটি গাছের ডাল ভেঙে গায়ে পড়লে আহত হন। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের পাকার মাথা এলাকায় বসত ঘরের ওপর গাছ চাপা পড়ে মফিজুল ইসলাম (৬৫) নিহত হয়েছেন। এসম মফিজুলের ছেলে, ছেলের স্ত্রী এবং  নাতি আহত হয়েছে।

অপরদিকে ভোর রাতের দিকে জোয়ারের পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে গেলে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় রাবেয়া বেগম (২৫) নামের এক নারী পানিতে ডুবে মারা যান।

বরগুনা

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় বরগুনায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম আমেনা খাতুন। তার বয়স ১১৫ বছর। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালি গ্রামের বাসিন্দা। তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

শরীয়তপুর 

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় বসতঘরের ওপর গাছ পড়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় সাফিয়া খাতুন (৬৫) নামে এক নারী মারা গেছেন। সোমবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান সোহেল।

সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলায় যমুনা নদীর ক্যানেলে নৌকাডুবে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। লগি-বৈঠাচালিত ছোট নৌকায় সদর উপজেলার শিল্পপার্ক থেকে পুর্বমোহনপুর বাড়ি যাওয়ার পথে সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত নয়টার দিকে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে এ নৌকাটি ডুবে যায়।

নিহত মা-ছেলেরা হলেন-পুর্বমোহনপুর গ্রামের খোকনের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৮) ও তার ছেলে আরাফাত হোসেন (২)।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে শিল্পপার্ক এলাকা থেকে একটি ছোট্ট নৌকায় আয়েশা খাতুন ও তার দুই বছরের ছেলেসহ ৬ জন পুর্বমোহনপুর বাড়িতে ফিরছিলেন। মাঝপথে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় আরাফাত মায়ের কোল থেকে নদীতে পড়ে মারা যায়। আর আয়েশা খাতুনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তবে বাকিরা সাঁতার কেটে তীরে উঠতে সক্ষম হন বলে জানান ওসি।

পটুয়াখালী

পটুয়াখালীর প্রতাপপুর লঞ্চঘাটে নোঙর করা ইটভর্তি ট্রলার ডুবে নিখোঁজ নূর ইসলামের (৪০) লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। আজ মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) পটুয়াখালী নদী ফায়ার স্টেশনের ডুবুরি দল ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ট্রলারের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পটুয়াখালী নদী ফায়ার স্টেশনের টিম লিডার মো. মজিবর রহমান এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, সোমবার রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নের প্রতাপপুর লঞ্চঘাটে নোঙর করা অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়।

ওই ট্রলারের মালিক জলিল মোল্লা তীরে উঠে আসতে সক্ষম হন।

জানা গেছে, পটুয়াখালীর একটি ইটভাটা থেকে ট্রালার মালিক জলিল মোল্লা ২৫ হাজার ইট নিয়ে মুরাদিয়া যাচ্ছিলেন। ওই ট্রলারেই কাজ করতেন সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের নাজিরপুর গ্রামের রশিদ মোল্লার ছেলে নূর ইসলাম। ঘূর্ণিঝড়ের খবরে ইটভর্তি ট্রলার লঞ্চঘাটে নোঙর করে রাখা হয়। পরে রাতে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ডুবে গিয়ে নূর ইসলাম নিখোঁজ হন।

নূর ইসলামের শ্যালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, ইটের ট্রলারে ভগ্নিপতি নূর ইসলাম ও মালিক ছিলেন। মালিক জলিল মোল্লা আমার ভগ্নিপতিকে ট্রলারে রেখেই ট্রলার থেকে লাফ দিয়ে তীরে উঠে আসে। ডুবুরি দল ট্রলারের ভেতর থেকেই তার লাশ উদ্ধার করেছে।

গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে গাছ চাপায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৫ অক্টোবর) রাতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচকাহনিয়া ও বাঁশবাড়ির চরপাড়া গ্রামে এ পৃথক দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, পাঁচকাহনিয়া গ্রামের রেজাউল খার স্ত্রী সারমিন বেগম (২৫) ও বাঁশবাড়ির চরপাড়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের স্ত্রী রোমেছা বেগম (৫৮)।

টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল মনসুর জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে রাত সাড়ে ৯টার দিকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচকাহনিয়া গ্রামে রেজাউল খার বাড়ির পাশের খেজুর গাছ তার ঘরের ওপড়ে পড়ে।

এতে ঘরের মধ্যে থাকা তার স্ত্রী সারমিন বেগম ঘটনাস্থলে নিহত হন।

অপরদিকে, রাত সোয়া ৮টার দিকে একই উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার চরপাড়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের ঘরের ওপর চম্বল গাছ উপড়ে পড়ে। ওই গাছ সরাতে গিয়ে রোমেছা বেগম গাছ চাপায় নিহত হন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানিয়েছেন, নিহতদের দাফন কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের বসতঘর ঠিক করে দেওয়া হবে।

এছাড়া রাজধানী ঢাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

Print Friendly and PDF