প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর, ২০২২ ১১:৪৩ : পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ষড়ঋতুতে শীতের আগমন বৈচিত্র্যময়। কিন্তু শীতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অভাবনীয় জনদুর্ভোগ।
সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে শীতের বিচরণ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ৪ মাস। হিমালয়ের খুব কাছে হবার কারণে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে এই জেলায়। তাপমাত্রা এক অংকের ঘরে নেমে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়ে মানুষ।
শীতজনিত নানা রোগ বালাই আক্রমণ করে শিশুসহ বয়স্ক মানুষদের। ছিন্নমূল মানুষসহ নিম্নবিত্তরা জনদুর্ভোগে পড়ে।শেষ আশ্বিনে এসে পঞ্চগড়সহ উত্তরের জেলাগুলোতে প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শীতের। ইতোমধ্যে শীতের নমুনাও শুরু হয়েছে এই অঞ্চলে। রাতভর মাঝারী কুয়াশা আর সূর্যোদয়ের পরও গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু জানান দিচ্ছে শীত আসছে।
কুয়াশার কারণে সূর্যোদয়ের অনেক পর পর্যন্ত সড়ক মহাসড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। কমতে শুরু করেছে রাত ও দিনের তাপমাত্রা। দিনে রোদ থাকলেও এখন আর প্রচণ্ড তাপ অনুভূত হচ্ছে না। আর সন্ধ্যার পর থেকেই বন্ধ রাখতে হচ্ছে ফ্যানের সুইচ। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো শীতের আমেজ শুরু হয়ে যাবে এই অঞ্চলে এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
রোববার (১৬ অক্টোবর) ভোর রাত থেকেই মাঝারী কুয়াশার চাদর ঢেকে ছিল পঞ্চগড়সহ উত্তরের জনপদ। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত পঞ্চগড়সহ রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় গত কয়েকদিন ধরেই ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারী কুয়াশা ঝরছে। সাধারণত কার্তিকের শুরু থেকে এই অঞ্চলে শীত শুরু হলেও গত সপ্তাহে কয়েক দফা বৃষ্টির পর একটু আগেভাগেই এবার শীতের আগমনী বার্তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে সারাদিন রোদ থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকেই শীতল হাওয়ার কারণে এসি-ফ্যানের সুইচ অফ রাখতে হচ্ছে। আর মধ্যরাতের পর গায়ে জড়াতে হচ্ছে কাঁথা-কম্বল।
শীতের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে শীতের সম্বল লেপ তোষক তৈরি শুরু করে দিয়েছেন উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা। অনেকে পুরাতন লেপ তোষক খুলে নতুন করে তৈরি করে নিচ্ছেন। শীতের শুরুতেই বর্তমানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন লেপ তৈরির কারিগররা। একেকজন কারিগর প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫টি করে লেপ সেলাই করছেন বলে জেলা শহরের কদমতলা রোডের তুলা ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল জানান।
তিনি জানান, তুলা ও কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার লেপের দামও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তার পর উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন আগেভাগেই লেপ সেলাই করছেন। কেউবা আবার পুরনো লেপ নতুন করে সেলাই করে নিচ্ছেন।
তবে শীতের প্রস্তুতি নেই খেটে খাওয়া ও ছ্ন্নিমূল মানুষদের। হাতে কাজ কম ও দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসার সামলানোটাই তাদের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে শীত নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। লেপ তৈরি করার মতো তাদের কোনো সামর্থ্য নেই। তাই শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে চট বা ছেড়া কাপড় দিয়ে পুরনো কাঁথা মেরামত করার চেষ্টা করছেন তারা। প্রচণ্ড শীতে কাহিল মানুষদের জন্য প্রতিবছর সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। কিন্তু এগুলোর পরিমাণ এতই নগণ্য যে একটি গ্রামের মাত্র দুই একজন এর সুযোগ পায়। বেসরকারি উদ্যোগে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও শহরের আশপাশেই এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকে। প্রত্যন্ত এলাকার লোকজন এই সব শীতবস্ত্রের দেখাই পায় না।
দেশের সবচেয়ে বেশি শীতপ্রবণ জেলা পঞ্চগড়। হিমালয়ের খুব কাছে অবস্থান হওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে এখানে শীতের তীব্রতা প্রতিবছরই বেশি থাকে। শীত মৌসুমের দেশের মধ্যে বেশিরভাগ দিনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। গত মৌসুমের মত এবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা শুরু করেছে তারা। গত ছয় দিনের মধ্যে চারদিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায়।
রোববার (১৬ অক্টোবর) সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার ২২ দশমিক ৯ এবং শুক্রবার ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং এর আগে গত সোমবার ২২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয় তেঁতুলিয়ায়। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, আকাশে এখনও মেঘ রয়েছে। বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর মেঘ কেটে গেলেই শুরু হয়ে যাবে পুরো শীত মৌসুম।