প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর, ২০২২ ১১:২৯ : পূর্বাহ্ণ
১৫ অক্টোবর, আজ বিশ্ব ছাত্র দিবস। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবরই প্রথম বিশ্ব ছাত্র দিবস পালিত হয়। প্রতি বছর আজকের এই দিনে পালিত হয় এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনার্থে। সেই ব্যক্তিত্বটি হলেন ভারতের মহান মহাকাশ বিজ্ঞানী ও একাদশ রাষ্ট্রপতি (২০০২ থেকে ২০০৭) এ. পি. জে. আবদুল কালাম ( ১৯৩১ থেকে ২০১৫)।
বিজ্ঞানের গবেষণায় নিরলস পরিশ্রমে ভারতকে বিশ্বের মাঝে এক উচ্চতার আসনে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। জীবদ্দশায় তার ৮৪ বছরের দীর্ঘ ও সফল কর্মজীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও দর্শন থেকে তিনি অনুভব করেছেন তরুণ প্রজন্ম অর্থাৎ ছাত্র ছাত্রীরাই আসল শক্তি। শুধু মাত্র তারাই গড়তে পারে আগামী দিনের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত শত প্রতিকূলতার মাঝে।
তাই, ‘তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান হলো ভিন্নভাবে চিন্তা করার সাহস থাকতে হবে। আবিষ্কারের নেশা থাকতে হবে। যে পথে কেউ যায় নি, সে পথে চলতে হবে। অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস থাকতে হবে। সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং তারপর সফল হতে হবে। এগুলোই হলো সবচেয়ে মহৎ গুণ। এভাবেই তাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদের কাছে এটাই আমার বার্তা’।
এভাবে এগিয়ে চলার জন্য অসংখ্য মহামূল্যবান বাণীতে এক ব্যতিক্রমী শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন শত কাজের মাঝে। শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। স্বভাবতই তিনি তার জীবদ্দশায় দেশের ছাত্রসমাজ-সমগ্র ভারতীয়দের মনে ও হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। একাধিক ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাকে। কখনো তিনি বিজ্ঞানী, কখনো শিক্ষক আবার তিনিই ভারতের রাষ্ট্রপতিপদে আসীন হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
তিনি জন্মেছিলেন তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের এক দরিদ্র পরিবারে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর। কর্মদক্ষতায় তিনি পরিচিত হয়েছেন ‘মিসাইল ম্যান’ নামে। তবে আবদুল কালাম নিজেকে শিক্ষক ভাবতেই বেশি পছন্দ করতেন। জাতিসংঘও ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ড. এ. পি. জে. আবদুল কালামের ৭৯ তম জন্মদিনে তাকে সম্মান জানাতে এবং তারই আদর্শে ছাত্রদের কঠোর পরিশ্রম ও সংকল্পে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে ১৫ অক্টোবর তারিখটিকে বিশ্ব ছাত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
এ বিষয়ে উল্লেখ্য এই যে, প্রতি বছর ১৭ নভেম্বর তারিখটিও উদ্যাপন করা হয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস বা আন্তর্জাতিক ছাত্র দিবস আজ হিসেবে জাতিসংঘের ২০০০ সালের ঘোষণা অনুযায়ী। সেটির উদ্দেশ্য হলো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদী চেতনার স্বীকৃতি হিসেবে। কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে নাজিরা চেকোশ্লাভাকিয়ায় আগ্রাসন চালিয়ে পুরো দেশ দখল করে নেয়। এতে স্বাধীন চেকোশ্লাভাকিয়া প্রজাতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয় দেশের সর্বত্র।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের একত্র করা হয়। এদের একজন নেতা বাড়ি ফেরার পথে জার্মান সেনাদের হাতে নিহত হলে তাদের আন্দোলন আরো তীব্র আকার ধারণ করে। তাদের প্রতিহত করতে বন্ধ করা হয় সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১২০০ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে সংশোধনাগারের পাঠানো হয় এবং বিনা বিচারে নয়জন ছাত্র ও শিক্ষককে ফাঁসি দেওয়া হয়। এই নির্মমতায় বিশ্ববাসী উদ্বেলিত হয়।
বিশ্বের ছাত্রদের কাছে দিবস দুটি বহু সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যের শিক্ষার্থীদের পালনীয় উৎসব হলেও তাৎপর্য পৃথক। ১৫ অক্টোবরের উদ্দেশ্য ছাত্রসমাজের অনুপ্রেরণাদাত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন আর ১৭ই নভেম্বরের উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী চেতনার স্বীকৃতির পক্ষে থাকার জন্য।