প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর, ২০২২ ১১:১৮ : পূর্বাহ্ণ
তরুণ বয়সে শরীরের তেজ থাকায় অনেক কিছুই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় না। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নান অসুখ ঝুঁকে বসে শরীরে। এসবের মধ্যে রয়েছে চোখে ছানি পড়া, জানা তথ্য মনে করতে সমস্যা, হাড়গোড় বেঁকে বসার মতো নানা সমস্যা। তবে আগে থেকে সাবধানতা অবলম্বন করলে এসব অসুখ পুরো ঠেকানো সম্ভব না হলেও অনেকটা সুস্থ থাকা যায়।
ঢাকার সিনিয়র সিটিজেন হসপিটাল প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকেন। হাসপাতালটির জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিষয়ক চিকিৎসক সামনুন তাহা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বয়স্কদের মধ্যে পাঁচটি অসুখ বেশি পাওয়া যায়।
মস্তিষ্ক স্ট্রোক: মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত হলে স্ট্রোক হতে পারে। এটি হলে শরীরের কোনো একটি অংশ, হাত-পা-মুখের একদিক অবশ হয়ে বেঁকে যেতে পারে, জিহ্বা অসাড় হয়ে অনেক সময় কথা জড়িয়ে যায়, চোখে ঝাপসা দেখার মতো সমস্যা হয়। বমি কিংবা বমিভাব সমস্যাও হয়। আবার অনেক সময় স্ট্রোকে মৃত্যু হয় অথবা শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও দেখা দিয়ে থাকে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের অসুখের জন্য বয়স্কদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর নারীদের তুলনায় পুরুষদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে স্ট্রোকের।
নি অস্টিওআর্থারাইটিস: হাঁটুতে ব্যথা তৈরি করে থাকে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাঁটুর হাড়ে থাকা তরল পদার্থ কমে যায়। পা ভাঁজের সময় হাঁটুর দুই হাড়ে ঘষা লাগে। এতে ব্যথা হতে থাকে। হাঁটুতে শব্দ হয়। অনেক ক্ষেত্রে হাঁটুর কাছ থেকে পা বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পুরুষদের থেকে নারীদের বেশি হয়ে থাকে এই অসুখ।
পার্কিনসন্স ডিজিজ: সাধারণত রাসায়নিক পদার্থের ঘাটতির জন্য দেখা দিয়ে থাকে এই রোগ। এই রোগ হলে প্রায় হাত-পা-মাথা মৃদু কাঁপতে দেখা যায়। শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। হাঁটা চলায় ধীরগতি তৈরি হয়। আর স্বাভাবিকভাবে নারীদের তুলনায় এই রোগটি বেশি হয়ে থাকে পুরুষদের। এটি পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নয়।
ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ: এটি এক ধরনের মস্তিষ্কের রোগ। সাধারণ এই রোগ হলে কোনো কিছু মনে রাখতে না পারার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। কোথায় কী রাখা আছে, কখন কী করতে হবে, এসব ইত্যাদি মনে না রাখার মতো সমস্যা হয়। কোনো ব্যক্তির নাম কিংবা কিছুক্ষণ আগে করা কোনো কাজ ভুলে যায় অনেকে।
চিকিৎসক সামনুন তাহা জানিয়েছেন, ডিমেনশিয়ার কোনো চিকিৎসা নেই। আর বাংলাদেশে আগের থেকে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এখন বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স: অনেক সময় নারীমের মধ্যে প্রস্রাব ধরে না রাখার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। মূত্রথলির পেশি দুর্বল হলে দেখা দিয়ে থাকে এই সময়। সাধারণত যারা এই সমস্যা ভোগেন তাদের প্রায়ই হাঁচি-কাশি দিলে কিংবা ভারী কিছু তোলার সময় মূত্রাশয়ে চাপ পড়ে। তখন অনিচ্ছাকৃতভাবেই মূত্র বের হয়। ফলে মূত্রথলিতে প্রদাহ হতে পারে। নারীদের সন্তান প্রসবের জন্য পেলভিক মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়। আবার মেনোপজ হলে শরীরে ইস্টোজেন হরমোন হ্রাস পায়। এতে সমস্যাটি বেশি দেখা দিতে পারে।
জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিষয়ক এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, বয়স ছাড়াও কিছু অভ্যাসের কারণে এসব অসুখের ঝুঁকি বেড়ে যাতে পারে। আমাদের দেশে মেঝেতে বসে কাজের প্রবণতা রয়েছে। বিশেষ করে নারীরা হাঁটু গেড়ে বসে ঘর পরিষ্কার, কাপড় কাচা, রান্না করা ইত্যাদি। এসব কাজে হাঁটুতে চাপ সৃষ্টি হয়। আমার কোনো কারণে নারীরা প্রস্রাব আটকে রাখে। তাদের মূত্রনালির ইনফেকশন হলে সময়মতো চিকিৎসা নেয়া হয় না। এসব কারণে ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স বেশি হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে লজ্জায় বলতে চায় না তারা।
সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে যা করা যেতে পারে: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীর জরাগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক। এসব রোগ পুরোপুরি ঠেকানো না গেলেও কিছুটা বিলম্বিত করা সম্ভব, নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। হাঁটুর ব্যথার ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম, কায়িম পরিশ্রম ভালো উপকার দিতে পারে। হাঁটু গেড়ে কাজ করা কমাতে হবে। এছাড়া ভিটামিন ডি বৃদ্ধির জন্য সূর্যের আলোতে যাওয়া এবং ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়া।
ভিটামিন ডিও ক্যালসিয়াম ওষুধ সেবন: ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স হলে অনেকে বিষয়টি লুকিয় রাখেন। চিকিৎসকের পরামর্শ, প্রস্রাব এলে তা চেপে না ধরে সময়মত ত্যাগ করা উচিত। মূত্রথলির পেশি শক্ত করা, মূত্রথলির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ব্যায়ামও কাজে লাগে। আর নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পরে চিকিৎসকরা কিছু ওষুধ দিয়ে থাকেন, সেসব হাঁটুর ব্যথা ও ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সজনিত সমস্যায় উপকারে আসে।
✪ আরও পড়ুন: ওজন বেড়ে যাওয়ায় কী শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহ কমে?
ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্কের ব্যবহার বৃদ্ধি জরুরি বিষয়। এ জন্য বই পড়া, শব্দ তৈরির খেলা, সামাজিক কার্যক্রম বৃদ্ধি, মানুষের সঙ্গে মেলামেশার প্রবণতা বৃদ্ধি, মস্তিষ্ক সজীব রাখে এমন কিছু কাজ করতে হবে।
পার্কিনসন্স ডিজিজের কোনো নিরাময় নেই। তবে লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গ ওষুধ সেবন শুরু করলে এর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এই রোগে ওষুধ চাড়াও ফিজিওথেরাপি কাজে আসে।
হার্টের ক্ষেত্রে যা ভালো তা ব্রেনের জন্য ভালো বলছেন চিকিৎসক। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রেশারের ওষুধ ঠিকমত খাওয়া, রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা ,চর্বি জাতীয় খাবার কম খাওয়া, ইত্যাদি কারণে বয়সকালে নানা অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং তা স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।