চট্টগ্রাম, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হঠাৎ সৌদি আরব-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বে এত তিক্ততা কেন?

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর, ২০২২ ৫:৩৬ : অপরাহ্ণ

তেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পার্স টুডের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বিষয়টি পরিষ্কার করেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমি নিশ্চিত, তাদের এ সিদ্ধান্তের পর তিনি তা-ই করছেন।

জন কিরবি জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে থাকার এবং তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় সৌদি আরবকে ‘কঠোর’ পরিণতি ভোগ করতে হবে। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

একই দিনে মার্কিন সংবাদমাধ্যমটিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সৌদি যা করেছে, সেজন্য দেশটির কিছু হতে চলেছে। আমি কী ভাবছি এবং আমার মনে কী আছে, সেটা এখন বলতে চাচ্ছি না। তবে তাদের পরিণতি ভোগ করতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আভাস দেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর কংগ্রেসে অধিবেশন শুরু হবে। সেসময়ই সৌদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের ১৩ সদস্য এবং এর বাইরের ১১টি উৎপাদনকারী দেশের জোট হচ্ছে ওপেক প্লাস। গত বুধবার মার্কিন চাপ উপেক্ষা করে প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি।

ওপেক প্লাসের এ সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসন মনে করছে, সৌদি আবর-রাশিয়া নেতৃত্বাধীন জোটের সিদ্ধান্তের কারণে মার্কিন মুলুকে তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে। আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে যা ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট দলের জন্য মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। অথচ ইউক্রেন যুদ্ধের সময় রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি। ফলে তাদের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

এরই মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে পরামর্শ দিয়েছেন ইউএসের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিবিদ, সিনেটর ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা। শুধু তাই নয়, সৌদি আরব থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সেনা প্রত্যাহার করতে মার্কিন কংগ্রেসে বিল উত্থাপন হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, মার্কিন আইনপ্রণেতাসহ বিদেশি মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ‘পর্যালোচনা’ করা হচ্ছে। আমরা এখন কোথায় আছি তা পর্যালোচনা করছি। খুব ঘনিষ্ঠভাবে তা পর্যবেক্ষণ করব। পাশাপাশি অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও কথা বলব। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদন-এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্বজুড়ে দাম কম রাখতে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থ জোগান বন্ধে সৌদি আরবকে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ করে হোয়াইট হাউস। তবে তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় রুশ-সৌদি নেতৃত্বাধীন ওপেক প্লাস।

মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, উচ্চ মূল্যে তেল বিক্রি করে ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়ন করছে রাশিয়া। সেটা অদূর ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে। এরই মধ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তেলের উত্তোলন বাড়ানোর আহ্বান জানায়নি মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে তা জানানো হয়েছে।

Print Friendly and PDF