প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:৩৯ : পূর্বাহ্ণ
কয়েকমাস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী রড ও সিমেন্টের বাজার। ৩ মাসের ব্যবধানে টনপ্রতি রডের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। অন্যদিকে সিমেন্টের দামও বস্তা প্রতি বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচামাল আমদানি নির্ভর হওয়ায় বেড়েছে দাম। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যক্তি পর্যায়ে এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে পড়েছে। রিহ্যাব বলছে, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে আবাসন খাতে তৈরি হয়েছে স্থবিরতা।
গৃহ নির্মাণ কিংবা অবকাঠামোর সব ধরনের কাজেই দরকার রড এবং সিমেন্ট। কিন্তু বৈশ্বিক নানা কারণে এই দুই নির্মাণ উপকরণের দাম এখন আকাশচুম্বী। বিশ্ব বাজারে কাঁচামালের দাম বেশি হওয়ায়, স্থানীয় বাজারেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রড এবং সিমেন্ট। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায়, আবাসন খাত নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
সরকারি সংস্থা, টিসিবির বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে রডের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। মান ভেদে এক টন রডের বিক্রয় মূল্য ৯৩-৯৫ হাজার টাকা। যা গত তিন মাস আগেও বিক্রি হচ্ছিলো ৮৬-৮৭ হাজার টাকায়। বাড়তির দিকে সিমেন্টের দামও। খুচরা পর্যায়ে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্টের বিক্রয় মূল্য ৫৫০-৬৬০ টাকা। দাম বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী বলছেন, রড-সিমেন্ট সাধারণত ডলারে কেনা হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। এজন্য দেশে এসবের দাম বেড়ে গেছে। এখন আমরা তো অসহায়। এ সব কিছুর পেছনে আছে সিন্ডিকেট। তারা আমাদেরকে যেভাবে নাচায় আমরা সেভাবে নাচি, নাচতে বাধ্য হই। আগে ধরেন, প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম ছিল ৪৪০-৪৬০ টাকা। তারপর বিভিন্ন সময়ে দশ টাকা করে বাড়তে বাড়তে এখন সাড়ে পাঁচশ’র উপরে চলে গেছে। মানভেদে প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম প্রায় ৭০-৯০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে সংকটে পড়েছে অনেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অনেক জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কাজ।
ঠিকাদাররা বলছেন, যেভাবে দাম বাড়ছে এখনই যদি এর লাগাম টেনে না ধরা হয় তাহলে কাজ করা সম্ভব না। আমরা দিন দিন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। আমরা নতুন করে কোনো কাজ ধরছি না। দাম বৃদ্ধির কারণে আমরা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছি।
ওদিকে, রড ও সিমেন্টের যৌক্তিক দাম খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। আমদানিকারক ও উৎপাদকদের কাছে চিঠি দিয়ে ১১ ধরনের তথ্য জেনেছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠান। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব বলছে, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে আবাসন ব্যবসায় নেমে এসেছে স্থবিরতা।
রিহ্যাবের প্রথম সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, রড-সিমেন্টের দাম বাড়লে যে শুধু আবাসন খাতই সমস্যায় পড়বে তা নয়। বরং এটি দেশের যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজের জন্যই সমস্যার উদ্রেক করবে। দাম বৃদ্ধির কারণে রড়-সিমেন্টের বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। আমরা যখন একটা প্রোজেক্ট করি তখন আমাদের একটা বাজেট থাকে, যখন নির্মাণ খরচ আমাদের বাজেট অতিক্রম করে তখন আমরা কাজের গতি কমিয়ে দিতে বাধ্য হই।
জানা গেছে, দেশে বার্ষিক রডের চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ টন। অন্যদিকে সিমেন্টের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টন। প্রয়োজনীয় এই দুই পণ্যের দাম শিগগিরই বেধে দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।