প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২:৪২ : অপরাহ্ণ
জ্বালানি, অবকাঠামো ও পরিবহনখাতে বিনিয়োগের জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে বিনিয়োগের অবাধ সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের প্রতি এই আহ্বান জানান। আজ (বুধবার) সকালে নয়া দিল্লিতে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব বলেন। আজ (বুধবার) সকালে দিল্লিতে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) যৌথভাবে আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উদার রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের অবকাঠামো, উৎপাদন, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো প্রকল্প, উৎপাদন, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করব। ভারতীয় বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সময়, খরচ কমিয়ে বাই-ব্যাক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে পারে’।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশে এই অঞ্চলের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে বিস্তৃত সুযোগ-সুবিধা, আকর্ষণীয় প্রণোদনা নীতি রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে শিল্প, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য, মোংলা এবং মিরেরসরাইয়ে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। আমি আজ এখানে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের সদিচ্ছাকে কাজে লাগানোর পথকে আরও প্রশস্ত করবে এবং এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনবে। ভারতীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর এখন বাংলাদেশের দিকে আরও দৃষ্টি দিয়ে এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কম খরচ এবং বিশাল ভোক্তা সংখ্যার সুবিধা নেওয়ার সময় এসেছে। তিনি আরও বলেন, শিল্পের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং অবস্থানের পূর্ণ সুবিধা নিতে তারা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক ‘প্রতিবেশী কূটনীতির’ রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক এবং রোগী ভারতে যায়। হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক এখন বাংলাদেশে কাজ করছে, উভয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর বন্ধুত্বের বন্ধন আরও বৃদ্ধি পাবে ও বিকশিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গেও উঠে আসে। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী পণ্য ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করেছে। এটি সাপ্লাই চেইনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ অনেক দেশ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। তারপরও এটা ভালো খবর যে, এসব চ্যালেঞ্জের পরও ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম।
এর আগে বুধবার (৭ই সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সাড়ে ন’টায় ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়নমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী আজ ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সভায় এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসারদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল বৃহস্পতিবার (০৮ই সেপ্টেম্বর) ঢাকায় ফেরার আগে রাজস্থানের খাজা গরিব নওয়াজ দরগাহ শরিফ, আজমির (আজমির শরিফ দরগাহ) জিয়ারত করবেন।