প্রকাশ: ২৯ আগস্ট, ২০২২ ৬:২৪ : অপরাহ্ণ
শিক্ষাজীবনে কোনো বোর্ড পরীক্ষায় জিপিএ-৫ কিংবা শীর্ষ স্থান অর্জন না করেও গুচ্ছে দেশসেরা স্থান অর্জনের চমক দেখিয়েছেন কুমিল্লার ঈশিকা জান্নাত। নতুন শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগে ৮৬ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি।
গত ২০ আগস্ট বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত গুচ্ছের ‘সি’ ইউনিটের মোট ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্র থেকে ঈশিকা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তার ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর ৫২৮৯৩৪।
ঈশিকা জেলার মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল গ্রামের প্রবাসী আবদুল হাকিম মোল্লা ও হাসিনা বেগমের এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট। ঈশিকা এই সাফল্যের জন্য তার বড় বোন কুমিল্লা কোটবাড়ি সোনালী ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার জান্নাতুল মুনিয়া ওরফে মুন্নীর সহায়তার কথা স্মরণ করেন।
জানা গেছে, ২০০২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন ঈশিকা জান্নাত। ২০১৩ সালে প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষায় ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তিনি ২০১৬ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় পান জিপিএ ৪.৫০, ২০১৮ সালে সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ৪.৫৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং ২০২১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৯২ পান। তবে মেধায় হঠাৎ করেই জ্বলে উঠেছেন ঈশিকা। গুচ্ছে প্রথম হওয়ার এমন ফলাফল প্রথমে তিনি নিজেও বিশ্বাস করতে পারেননি, রীতিমতো অবাকও হয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এদিকে শিক্ষাজীবনে কোনো বোর্ড পরীক্ষায় জিপিএ-৫ কিংবা শীর্ষ স্থান অর্জন না করেও গুচ্ছে ঈশিকার শীর্ষ স্থান অর্জনে চমকের বিষয়টি তার পরিবারসহ শিক্ষাঙ্গণ ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।
দেশসেরা ফল পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ঈশিকা বলেন, রেজাল্ট পাওয়ার পর অনেকটা অবাক হয়েছি। পরীক্ষা ভালো দিয়েছিলাম, কিন্তু প্রথম হতে পারবো এমনটা কখনো ভাবিনি। প্রথমে তো বিশ্বাসই করতে পারিনি, আল্লাহ অবাক করে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমি খুব ভালো ছাত্রী ছিলাম না। কলেজে উঠার পর একটু পড়াশোনায় মনযোগ দেই, আল্লাহর রহমতে প্রথম হয়েছি। আমার আপু (জান্নাতুল মুনিয়া) আমাকে পড়ালেখায় সবসময় সাহায্য করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষাতে প্রথম হবার পরেও এই খুশি মনকে সেভাবে সাড়া জাগায়নি। কারণ, ইচ্ছা ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার, কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি।
নবীনদের পরামর্শ দিয়ে ঈশিকা বলেন, যারা ভালো ফলাফল করতে চায় তাদের অবশ্যই প্রথমত সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রাখতে হবে। সেই সাথে নিয়ম করে পড়াশোনা করতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন বই না পড়ে যেকোনো একটি সিরিজের বই ভালো মতো পড়তে হবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফেসবুক থেকে দূরে থাকা। যেন সময়টা ভালো মতো কাজে লাগানো যায়। ঈশিকার বড় বোন মুনিয়া বলেন, ঈশিকা দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল তার। চান্স না পেয়ে হতাশ হয়ে যায়। পরে আমরা উৎসাহ দিয়েছি। এখন প্রথম হওয়ায় আমরা সবাই খুশি। ঈশিকার বাবা আবদুল হাকিম মোল্লা বলেন, যখন শুনেছি গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগে আমার মেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছে তখন আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। মেয়ের এমন সাফল্যে খুব খুশি হয়েছি, এটাই আমার বড় পাওয়া। মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই।
ঈশিকার দেশসেরা ফলাফলে খুশি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান। তিনি বলেন, পাবলিক ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আমরা এই কলেজের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার আয়োজন করবো।