চট্টগ্রাম, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪ , ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফরিদগঞ্জের কড়ৈতলীতে দুটি হাসপাতাল, রোগী আছে, ডাক্তার নাই! দুটিতেই তালা মারা!

প্রকাশ: ২ আগস্ট, ২০২২ ৩:০১ : অপরাহ্ণ

মোঃ মুজাম্মেল হোসেন মল্লিক: পাশাপাশি দুটি হাসপাতাল, দুটিই মনমুগ্ধকর ডিজাইনের বিশাল পাকা ভবন। হাসপাতালের চতুর্পাশের পরিবেশও দেখার মত। এবং এলাকাটি একটি জনবহুল এলাকা। পাশেই বিশাল ঐতিহ্যবাহী কড়ৈতলী বাজার। একসময় এখানে দৈনিক শত শত জটিল ও কঠিন রোগির চিকিৎসায় কোন ঘাটতি ছিল না। কিন্তু বর্তমানে উপজেলা এবং জেলার বড় বড় কর্মকর্তাদের দেখভালের অভাবে অবহেলায় হাসপাতাল দুটি জনশূন্য হয়ে পড়ে থাকে। হাসপাতাল দুটিতে বিভিন্ন এলাকা হতে দৈনিক শতশত রোগী এসে ডাক্তার এবং ঔষধের জন্য অপেক্ষমান থেকে শূন্য হাতে আবার চলে যায়। আর সরকারের ব্যর্থতার বিভিন্ন আওলা ঝাওলা বলে তারা বদনাম ছড়ায়।

এমনই ঘটনা ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮ নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের কড়ৈতলী বাজার সংলগ্ন কড়ৈতলী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কড়ৈতলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের।

সোমবার সকাল সাড়ে এগারটায় কড়ৈতলী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কড়ৈতলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে গেলে দেখা যায় বিশাল পরিসরে তৈরি হাসপাতাল দুটি। যার সৌন্দর্য প্রত্যেক মানুষের নজর কাড়ে। এ সময় দেখা যায় বাউন্ডারি ওয়ালের গেট খোলা। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতালটির ভিতরে ঢুকে দেখা যায় মূল হাসপাতালটিতে তালা মারা। হাসপাতালের সামনে দেখা যায় চিকিৎসা ও ঔষধের জন্য অপেক্ষমান আছে প্রায় ২০থেকে ২৫ জন মহিলা ও পুরুষ রোগী। কেউ কেউ খানিকটা অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে একই সময়ে ১০০ গজ দূরে কড়ৈতলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও গেইট এবং ভিতরের রুমগুলোতে বিশাল বিশাল তালা মারা। এসময় গেইটের সামনে অপেক্ষমান অনেক রোগীকে দেখা গেছে। তারাও খানিকটা অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছে। এ সময় উপস্থিত কমপক্ষে ১৫ রোগীর সাথে কথা হলে তারা বলেন,  প্রখর এই গরমের মধ্য দিয়ে ওষুধ নিতে এসেছি, কিন্তু ডাক্তার নাই, হাসপাতালে তালা মারা, তাই চলে যাচ্ছি।

হাসপাতালের সামনে সাংবাদিক এসেছে শুনে উৎসুক জনতার মধ্যে হাসপাতাল দুটির ঠিক পাশের বাড়ির ফরিদ হোসেন বলেন, তিনি প্রতিদিন দেখেন হাসপাতালের সামনে অসংখ্য রুগি, তারা ডাক্তার এবং ওষুধের জন্য অপেক্ষমান থাকেন। পরে আবার তারা কোনরকম সেবা না পেয়ে চলে যান। তিনি আরো বলেন হাসপাতালের সাবেক অবসরপ্রাপ্ত একজন পিয়ন মাঝে মাঝে এসে রোগীদের কি কি ওষুধ দিয়ে আবার চলে যান। এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান বলেন, তার বাড়ি হাসপাতালের পাশেই। তিনি বলেন, প্রতিদিনই তিনি দেখেন হাসপাতালের সামনে অসংখ্য রোগী এসে ভিড় করে। হাসপাতালে ডাক্তার এবং কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী না থাকায় কোনরকম চিকিৎসাসেবা না নিয়েই আবার তারা চলে যায়। এ সময় তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম বিষোদগার করতে দেখা যায়। যার কারণে সরকারের খুব দুর্নাম হচ্ছে। আমি সরকারদলীয় একজন নেতা হিসেবে হাসপাতাল দুটির উপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অন্যদিকে এলাকার সমাজসেবক মোঃ তোফাজ্জল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, এ হাসপাতাল দুটির পাশেই আমার বাড়ি। হাসপাতাল দুটির মূল চিত্র সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাত্রে যে কোন সময় তার চোখে পড়ে। তিনি বলেন, ফরিদগঞ্জের এই অঞ্চলের লাখো মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য এ হাসপাতাল দুটি নির্মিত হয়। অবহেলিত এই অঞ্চলের লাখো গরিব মানুষের চাঁদপুর অথবা ফরিদগঞ্জে গিয়ে চিকিৎসা সেবা করা সম্ভব নয়। তিনি অত্যন্ত আক্ষেপ করে বলেন, এই হাসপাতাল দুটিতে যারাই দায়িত্ব পালন করতে আসে তাদের প্রত্যেকের সাথেই এই অঞ্চলের মানুষের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রত্যেক কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর সাথে আমরা ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলি। কারণ, তারা যেন আমাদের এখানে থাকতে পারে। কিন্তু উপরমহলের দেখ বালের ঘাটতির কারণে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখানে থাকতে চায় না। বর্তমানে সাবেক একজন অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন মাঝে মাঝে এসে রোগীদের কিছু ওষুধ দিয়ে চলে যায়। আমি মাঝে মধ্যেই দেখি রোগীরা এখানে এসে সেবা না পেয়ে চলে যাওয়ার সময় দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে বিভিন্ন রকম অভিশাপ দিয়ে চলে যায়। আমি এই মুহূর্তে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় হাসপাতাল দুটির প্রতি নজর দেওয়ার জন্য আকুল আবেদন করছি।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান আশরাফ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আপাতত কোনো লোক নেই। তবে একজন লোক দ্বারা মাঝে মাঝে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মোঃ তসলিম মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কথা বলতে চাইলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Print Friendly and PDF