চট্টগ্রাম, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শবনম দাওরান: সংবাদ পাঠিকা থেকে আফগান শরণার্থী

প্রকাশ: ১ আগস্ট, ২০২২ ৫:৫৭ : অপরাহ্ণ

গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালেবান আসার পর রাতারাতি দেশটির নারীদের অবস্থার ঘটে পরিবর্তন। আর এভাবেই একজন সংবাদ পাঠিকার ক্যারিয়ার, স্বপ্ন ও আশার সামনে বসে যায় যতি চিহ্ন। যুক্তরাজ্যে এক বছর শরণার্থীর জীবন যাপন করা শবনম দাওরান আবার চেষ্টা করছেন নতুন করে সব শুরু করার। বিবিসিতে প্রকাশ করা হয়েছে এক সময়ের এই সংবাদ পাঠিকার জীবন সংগ্রামের কথা।

২০২১ সালের ১৪ আগস্ট, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দখল তালেবানরা নেয়ার আগের রাতে দেশটির এক টেলিভিশনে নিউজ বুলেটিন পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শবনম দাওরান। ২৪ বছর বয়সী এই উদীয়মান সংবাদ পাঠিকা যখন খবর পড়ছিলেন, তখন দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে টিভি পর্দায় চোখ রেখেছিলেন অসংখ্য মানুষ। সেদিনের কথা মনে করে শবনম বলেন, আমি এতটাই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম যে সংবাদ পাঠ করতে পারছিলাম না। যারা সেদিন আমাকে দেখতে পেয়েছেন তারা জানে, কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম!

পরদিন যখন ঘুম ভাঙে শবনমের, তখন কাবুলের দখল নিয়ে নিয়েছে তালেবানরা যোদ্ধারা। আগের রাতেই টিভি স্টেশনের যে সিটে বসে সংবাদ পাঠ করেছেন শবনম, এখন সেখানে তালেবানের সাদাকালো পতাকা নিয়ে বসে আছে এক সামরিক সদস্য। আর এই রূপান্তরই সূচনা করে এক নতুন যুগের।

প্রথম সংবাদ সম্মেলনে কক্ষ ভর্তি সাংবাদিকের সামনে তালেবান মুখপাত্র বলেছিলেন, নারী-পুরুষ কাজ করবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। পরের দিন কিছুটা নার্ভাস ও উত্তেজিত অবস্থায় কর্মক্ষেত্রের পোষাক পরে শবনম যান টিভি স্টেশনে। গিয়ে দেখেন, তালেবান সেনারা ঘিরে রেখেছে সেই ভবন। বলা হলো, ভেতরে কেবল পুরুষরাই প্রবেশ করতে পারবে। তাছাড়া নারীদের ব্যাপারে তখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এক তালেবান সেনা শবনমকে বলে, এখানে অনেক কাজ করেছো। এখন আমাদের পালা।

শবনম তখন বলেন, সেখানে কাজ করার সকল অধিকার আছে তার। জবাবে তার শরীরের দিকে রাইফেল তাক করে হুমকির সুরে এক সেনা বলে, একটি বুলেটই তোমার জন্য যথেষ্ট। এখান থেকে কি নিজে নিজেই চলে যাবে নাকি গুলি করবো?

তারপর সেই জায়গা ত্যাগ করেন শবনম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে পোস্ট করেন একটি ভিডিও। ভাইরাল হয়ে যাওয়া সেই ভিডিওর কারণে হুমকির মুখে পড়ে শবনম ও তার পরিবারের জীবন। কয়েকদিনের মধ্যেই ছোট দুই ভাইবোনকে নিয়ে দেশত্যাগ করেন তিনি। হাজারও আফগানের মতো যুক্তরাজ্যে শুরু হয় তার শরণার্থী জীবন। নতুন করে কাজের সুযোগ সেখানে সীমিত হওয়ায় দিন যাপনে অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করতে হয় তাকে।

শবনম বলেন, মনে হচ্ছে আফগানিস্তানে কাজ করা ৬টি বছর আমি হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমাকে ইংরেজি শিখতে হচ্ছে, যেতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম দিনগুলোতে আমি বাজার করতেও যেতে পারতাম না। প্রয়োজনীয় কিছুর ব্যাপারে আমরা সহজে জানাতেও পারতাম না। এটা সত্যিই কঠিন ও বেদনাদায়ক। এখানে কেবল জীবন শুরু হয়েছে আমাদের। জন্ম নেয়া শিশুর মতোই সব শুরু করতে হচ্ছে।

Print Friendly and PDF