চট্টগ্রাম, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘আমরা মাংসের লাগি টাউনেও আইছি’

প্রকাশ: ১০ জুলাই, ২০২২ ৩:৩০ : অপরাহ্ণ

‘বানবন্যার গেরামও কোরবানি কম হইসে। এর লাগি কেউ কোরবানির মাংস পাইছে কেউ পায় নাই। আমরা মাংসের লাগি টাউনেও আইছি।’ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের পুরান লক্ষণশ্রী গ্রামের মনমিলা খাতুন তার দুঃখের কথা বলেন।

একই গ্রামের জমিলা বিবি বলেন, এই ঈদে পিটাপুলি করতে পারি নাই। সব কিছু বানের পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বসতঘর ছাড়া কিছু নেই। সকালে ওঠে গোসল করে টাউন আইছি মাংসের লাগি। দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে মাংস সংগ্রহ করে বিকেলে রান্না করে রাতে সবাই মিলে খাব।

শহরের বড়পাড়া এলাকার মতলিব মিয়া বলেন, বন্যার কারণে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। তাই কোরবানি কম হইসে। গায়ের তুলনায় টাউন কোরবানি বেশি হয়, এজন্য আমরা মাংসে লাগি বাইর অইছি।

অচিন্তপুর গ্রামের রাবেয়া খাতুন বলেন, বন্যার কারণে ঈদের আনন্দ নেই। প্রতিটি ঘর, প্রতিটি বাড়ি, প্রত্যেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে কোরবানি দিতে পারেননি।

কুতুবপুর গ্রামের জলিল মিয়া বলেন, পোলাপাইনদের গায়ে নতুন জামাকাপড় দিমু কেমনে ঘরে ত খাওনের চাল নেই। সুনামগঞ্জের বানভাসি মানুষ কোরবানির মাংস পাওয়ার আশায় শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকার ধনাঢ্যদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ব্যাগ নিয়ে। সুনামগঞ্জ শহরের হাজীপাড়া, বাধনপাড়া, বড়পাড়া, তেঘরিয়া, ষোলঘর হাছনঘর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকায় তারা মাংসের জন্য এসেছেন। সারাদিন ঘুরে মাংস সংগ্রহ করে বাড়িতে গিয়ে রাতে রান্না করে খাবেন।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন, বন্যার কারণে জেলার ৯০ ভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের অনেকের ঈদ করার সামর্থ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে তার পরিমাণে কম।

জেলা ত্রাণ অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ঈদ উপহার ভিজিএফের চাল ও মাংস বিতরণ করা হয়েছে।

রোববার (১০ জুলাই) সকাল ৮টায় সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় কোর্ট মসজিদের ঈদগাহ ময়দানে প্রথম ঈদের জামাতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ঈদুল আজহার আনুষ্ঠানিকতা। ঈদুল আজহার নামাজ শেষে সামর্থবানেরা পশু কোরবানি করেন।

এদিকে সুনামগঞ্জে ১৩ লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে ঈদ যেন বাড়তি কষ্ট নিয়ে এসেছে। নদ নদীর পানি কমলে ঘর বাড়ি বানের পানিতে ভেসে যাওয়ায় এবং ঘর বাড়িতে এখনও কাদা থাকায় সুনামগঞ্জের সাতটি উপজেলার সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারা বাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জগন্নাথপুর, দিরাই, শাল্লা উপজেলার সাত হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ঈদ করছেন।

সুনামগঞ্জের সুলতানপুর আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো ৮০ টি পরিবার বাস করছেন। তাদের বসতঘর বসবাসের উপযোগী না হওয়ার কারণে তারা আজও বাড়ি যেতে পারেন নি। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষ জানান, বানের পানিতে ঘর বাড়ি ভেসে গেছে। সেই জন্য আশ্রয় কেন্দ্রেই আমাদের ঈদ করতে হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, জেলায় আনুমানিক ৩০ হাজার পশু কোরবানি হয়ছে। সুনামগঞ্জ জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, সুনামগঞ্জের সাতটি উপজেলার সাত হাজার মানুষ এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। তারা যাতে সুন্দরভাবে ঈদ করতে পারে সেই জন্য সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Print Friendly and PDF