চট্টগ্রাম, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেয়ের জন্য ৩০ বছর ধরে পুরুষের ছদ্মবেশে মা

প্রকাশ: ১৬ মে, ২০২২ ১২:২৮ : অপরাহ্ণ

প্রতিটি সন্তানের জন্য মা হলো পৃথিবীর বুকে সৃষ্টিকর্তার পাঠানো শ্রেষ্ঠ উপহার। এই মা সন্তানের জন্য জ্বলন্ত অঙ্গারে ঝাঁপাতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। তেমনই এক অদম্য মায়ের খবর উঠে এলো খবরের শিরোনামে।

জানা গেছে, মেয়ে হওয়ার পরপরই স্বামী হারানো ২০ বছর বয়সী বিধবা তরুণীর দিকে কুনজর পড়ে সমাজের শকুনরূপী নরপিচাশদের। সেই লড়াই জিততে, মেয়ের ও নিজের সুরক্ষায় আশ্চর্য কৌশল নিয়েছিলেন মা। মেয়েকে মানুষ করতে পুরুষের সাজে কাটিয়ে দিলেন তিন দশকের বেশি সময়।

দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এশিয়া নিউজসহ বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে রোববার প্রকাশিত হয় তামিলনাড়ুর এই ঘটনা। তখনকার সেই তরুণী মা বর্তমানে ৫৭ বছরের প্রৌঢ়া। তার নাম পেচিয়াম্মল।

থুথুকুডি জেলার কাতুনায়াক্কানপট্টি গ্রামের বাসিন্দা তরুণী পেচিয়াম্মলের বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় মারা যান তার স্বামী। কিছুদিন পর পেচিয়াম্মল বুঝতে পারেন তিনি গর্ভবতী। ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি।

এরপরেই সমস্যার সূত্রপাত। নিজের ও সন্তানের ভরণপোষণে কাজ খুঁজতে হয় তরুণীকে। কিন্তু কাজের জায়গায় হেনস্তার স্বীকার হন বারবার। অসহায় বিধবা তরুণী পেচিয়াম্মল শেষমেশ বাধ্য হয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেন। দ্বিতীয় বিয়ে না করে একা মেয়েকে মানুষ করতে পুরুষের ছদ্মবেশ গ্রহণ করেন।

বদলে ফেলেন নাম। পেচিয়াম্মল হয়ে যান মুথু। লম্বা চুল কেটে ফেলেন। স্থানীয় ছেলেদের মতো লুঙ্গি আর শার্ট পরা শুরু করেন। এবার কাজ পেতে অসুবিধা হয়নি। কাজের জায়গায় হেনস্তার তো কথাই নেই।

এভাবেই চায়ের দোকানের কর্মী থেকে হোটেল ‘বয়ে’র কাজ, বহু জায়াগায় কাজ করে নিজের ও সন্তানের সংসার টানেন পেচিয়াম্মল ওরফে মুথু। প্রৌঢ়া জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে বিষয়টি ‘স্বাভাবিক’ হয়ে যায়। তাকে সবাই ‘আন্নাচি’ বলে ডাকতেও শুরু করে। অচেনা পুরুষকে এই নামেই সম্বোধন করেন স্থানীয়রা।

পুরুষ সেজেও হাজার অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছে পেচিয়াম্মলকে। পুরুষের ছদ্মবেশে নেয়ায় বাসে মহিলা সিটে বসতে পারতেন না। পথেঘাটে পুরুষ শৌচালয়ই ব্যবহার করতে হত তাকে। রাজ্য সরকার মেয়েদের জন্য বাসযাত্রা বিনামূল্যে করে দিলেও অর্থকষ্টে থাকা পেচিয়াম্মলকে টিকিট কাটতেই হতো।

এমনকি লোকের মন থেকে সন্দেহ দূর করতে ভোটার কার্ড, আধার কার্ডেও পেচিয়াম্মল পুরুষ, নাম মুথু। পেচিয়াম্মল ওরফে মুথুর এই লড়াই কাজে এসেছে। তিনি মেয়েকে পড়াশুনো শিখিয়েছেন। তার বিয়েও দিয়েছেন।

তামিলনাড়ুর এই আশ্চর্য মা বলেন, ‘আমি সব ধরনের কাজ করেছি। মেয়েকে সুরক্ষিত রাখতে চেয়েছিলাম। তার ভবিষ্যতের কথা ভেবেছিলাম। যাবতীয় কষ্ট সহ্য করেছি মেয়ের মুখ চেয়ে। আমার কষ্ট সার্থক হয়েছে। এই পরিচয়েই বাকি জীবন কাটাতে চাই। এমনকি মৃত্যুর পরেও যেন আমাকে এভাবেই চেনে লোকে।

এমনকি পুরুষ হিসেবেই সরকারি ভাতা পেতে চান পেচিয়াম্মল। পেচিয়াম্মলের মেয়ে শানমুগাসুন্দরীও চান মায়ের ইচ্ছে পূর্ণ হোক। শানমুগাসুন্দরীর কথায়, ‘আমার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মা। আমি চাই প্রৌঢ় পুরুষদের প্রাপ্য ভাতা যেন মা পান।’

Print Friendly and PDF