প্রকাশ: ৭ মে, ২০২২ ১২:৩০ : অপরাহ্ণ
বিয়ের পর প্রত্যেক দম্পতির স্বপ্ন থাকে কোলজুড়ে আসবে নতুন অতিথি। কেউ বিয়ের পর পরই সন্তান নিয়ে নেন। আবার অনেকে দেরি করে সন্তান নিয়ে থাকেন। আবার অনেকে নিজেদের ইচ্ছায় সন্তান নিচ্ছেন না। তবে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা ও শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতার কারণেও মানুষ সন্তান নিতে চান না। কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে এমনটি বেশি ঘটে থাকে।
দশ বছরের দাম্পত্য জীবনে পা রেখেছে জিন্নাত আরা। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। দিনের কাজ শেষে নিজেদের মত করে সময় কাটান দুজনে। কিন্তু এই দশ বছরে জিন্নাত আরা একবারও সন্তান নিতে চাননি। এ বিষয় তিনি বলেন, ‘একটা বাচ্চা জন্মের পর থেকে যতদিন না ঐ বাচ্চা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে,ততদিন পর্যন্ত আমার টেনশন, আমার বাচ্চার টেনশন, এসব কিছু নিয়ে আমাকে চলতে হবে। আমার সন্তান প্রতিষ্ঠিত হলেই হবে না, আমৃত্যু আমাকে ঐ বাচ্চার চিন্তা করে জীবনের ৮০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে যেটা আমি করতে চাই না।’
তবে তার এই সিদ্ধান্তে প্রথম দিকে আপত্তি জানিয়েছিলেন তার স্বামী। কিন্তু এখন তিনি এই সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেছেন। তবে জিন্নাত আরার পিছু ছাড়েননি তার স্বামী এবং বাবার বাড়ির লোক। তারা এ সিদ্ধান্তে মোটেই খুশি নন।এদিকে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়ে যাওয়া, সম্পর্কের টানাপড়েন থেকে বিষণ্ণতা এই সব কিছুই নারীদের সন্তান নেয়ার ব্যাপারে চিন্তা করার একটা ক্ষেত্র তৈরি করছে এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এনে দিচ্ছে বলে ধারণা করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।
সন্তান না নেয়ার বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে এক নারী জানান, উত্তরাধিকারের চিন্তা এবং শেষ বয়সে ছেলেমেয়েরা দেখাশোনা করবে এমন চিন্তা থেকেই অনেকে সন্তান নিতে চান। কিন্তু এক্ষেত্রে তার চিন্তা কিছুটা ভিন্ন। তিনি জানান, ‘একটা সন্তান পালন করার জন্য যে মানসিকতা দরকার সেটা আমার নেই। আমার স্বামী আমার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। যদিও আমার বাবা এবং স্বামীর বাড়ির অনেকেই আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু আমরা চিন্তা করেছি দিন শেষে যেহেতু আমরা দুইজনেই একসঙ্গে থাকবো, আর আমরা দুজনেই যেহেতু সিদ্ধান্তে অটল, তাই আর কেউ সামনা সামনি আমাদের ঘাটায় না।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবর্তন হচ্ছে। তারা নিজেদের নিয়ে ভাবছে। তারা জীবনের ব্যস্ততা নিয়ে ভাবছে, পেশাজীবন নিয়ে ভাবছে। তার চেয়ে বড় কথা তারা সম্পর্কগুলো বোঝার চেষ্টা করছে। সন্তানের সঙ্গে দায়িত্বের বিষয় আছে, আর্থিক সক্ষমতার বিষয় আছে,সামাজিক নানা ধরনের নিরাপত্তার প্রশ্ন আছে, তো এই এতগুলো বিষয় সে নিতে পারবে কিনা সেই প্রশ্ন তার মনে আসছে। আর এসব বিষয়ে নারীরা সেটাকে চ্যালেঞ্জের জায়গায় নিয়ে গেছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা