চট্টগ্রাম, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমুদ্রে আটকেপড়া কন্টেইনার জাহাজকে টেনে আনা হলো জেটিতে

প্রকাশ: ৫ মে, ২০২২ ১১:১৭ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া এক্সপোর্ট কন্টেইনারবাহী জাহাজ গভীর সমুদ্রে আরেকটি তেলবাহী মাদারভেসেলের ধাক্কায় বিপদে পড়ার ২০ দিন পর জাহাজটি গভীর সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে এনেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। হাইয়ান সিটি নামে ভিয়েতনামের পতাকাবাহী জাহাজ এটি।

বুধবার (৪ মে) বিকেলে জাহাজটি গভীর সমুদ্র থেকে বেসরকারি কর্ণফুলী জেটিতে নিয়ে আসা হয়।

 
গত ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এক্সপোর্টের কনটেইনার নিয়ে যাত্রা শুরু করে। কুতুবদিয়া চ্যানেলে পৌঁছালে গভীর সমুদ্রে তেলবাহী ওরিয়েন একপ্রেস নামের আরেক জাহাজ ধাক্কা দেয়। এ সময় জাহাজটিতে পানি ঢুকে কাত হয়ে যায়। জাহাজটির পোর্ট সাইডে কার্গো হোল্ডে ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করে এবং জাহাজটি ৭ ডিগ্রি কাঁত হয়ে যায়। জাহাজের কার্গো হোল্ডে পানি প্রবেশের কারণে ড্রাফট বেড়ে ১০.৭ মিটার হয়ে যায় এবং জাহাজটি ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়। জাহাজটি সংঘর্ষের পর কুতুবদিয়া এলাকায় নোঙ্গর করে।
 

চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য কমোডোর মো. মোস্তাফিজুর রহমান  জানান, আমরা ১৪ এপ্রিল জাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়ার পর ভরা জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হাইয়ান সিটি ভিয়েতনামের পতাকাবাহী জাহাজটিতে ২০ জন নাবিক ছিল। এটি এক্সপোর্ট কন্টেইনার শিপ। ১৪ তারিখ বন্দর ত্যাগ করে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিল। আউটার অ্যাঙ্কারেজ পার হয়ে কুতুবদিয়ার কাছাকাছি গেলে তেলবাহী মাদার ভ্যাসেলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকটি কন্টেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সমুদ্রে পরে যায়। জাহাজটিতে পানি ঢুকে যায়। জাহাজটি পেছনের দিকে হালকা কাত হয়ে যায়।

তিনি জানান, কর্ণফুলী চ্যানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা ৯.৫ মিটার। পানি ঢুকে জাহাজটির হয় ১০.৭। বিদেশ যেতে হলে জাহাজটি ঠিক করতে হবে। জাহাজটি কোনভাবেই সমুদ্রে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছিল না। সেই সাথে কন্টেইনার পরে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই কারণে বিশ দিন ধরে ভরা জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিল।

 
চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য কমোডোর আরও বলেন, এম ভি হায়ান সিটি জাহাজে ১ হাজার ১৫৬ টিইইউস জরুরি রফতানিবাহী কন্টেইনার ছিল। যার রফতানি মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটিকে প্রয়োজনীয় মেরামত সম্পন্ন করার জন্য বোঝাইকৃত কন্টেইনার খালাস করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা জাহাজটিকে উদ্ধারকল্পে ঈদের ছুটি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জাহাজের মালিক প্রতিনিধি, স্থানীয় এজেন্ট, সেলভেজ সংস্থা, পিএন্ডআই, নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে চবকের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান  দ্রুত সমন্বয় সভা আহ্বান করে জাহাজটিকে বার্থিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
 
জাহাজটি কর্ণফুলী ড্রাই ডক জেটিতে ভিড়ানোর পর কন্টেইনার খালাসের নিমিত্তে কাস্টম ল্যান্ডিং পারমিট গ্রহণ করা হয় এবং কর্ণফুলী ড্রাই ডক জেটির ফোরশোরে ১০.৭ মিটার ড্রাফট উপযোগী জাহাজ বার্থিং এর জন্য প্রয়োজনীয় ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়।
 
এরপর চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ বিভাগের দক্ষ পাইলটিং, টাগ, স্থানীয় নৌ প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সেলভেজ ইউনিয়নের সদস্য বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের সেলভেজ কোম্পানি প্রান্তিক বেঙ্গল সার্ভিসের সহযোগিতায় জাহাজটিকে কর্ণফুলী ড্রাই ডক জেটিতে বার্থিং করানো হয়। দুঃসাহসিক এই উদ্ধার কার্যে চট্টগ্রাম বন্দরের টাগবোট, দুটি বিশেষায়িত পলিউশন কন্ট্রোল জাহাজ ছাড়াও প্রান্তিক বেঙ্গল সেলভেজ এন্ড ডাইভিং সার্ভিসের টাগবোট ব্যবহার করা হয়।
 
এরূপ জাহাজ উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করার দৃষ্টান্ত বহির্বিশ্বে বিরল। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাহসী ও সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে ৮০০ কোটি টাকার মূল্যের রফতানি পণ্য যেমন রক্ষা পেয়েছে তেমনি জাহাজ ডুবে গেলে স্বাভাবিক নৌ চলাচলে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ট হতো তা থেকে বন্দর রক্ষা পেয়েছে।
 
ফলে, আন্তর্জাতিক নৌ বাণিজ্যে চট্টগ্রাম বন্দর তথা বাংলাদেশের সুনাম যেমন অক্ষুণ্ন রয়েছে তেমন গার্মেন্টস শিল্পও বিরূপ প্রভাব মুক্ত হয়েছে। একইসাথে রফতানিকারকরা কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হতে রক্ষা পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে উদ্ধার কার্যের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমোডোর মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার নির্দেশনায় উদ্ধার কার্যে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত ছিলেন নৌ বিভাগের উপ-সংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. ফরিদুল আলম, হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ও সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মো. কামরুল আলম।

Print Friendly and PDF