প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ১১:০৮ : পূর্বাহ্ণ
‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’ বললেই বোঝা যায় মাঘ মাসে শীতের তীব্রতা কেমন। মাঘ মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে মানুষ। মাঘের এই প্রথম সপ্তাহে হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসময়ের বৃষ্টি। আর এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
অসময়ে আকাশ ভেঙে রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জে বৃষ্টি নেমেছে। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টিতে জেলার জনজীবন অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। নানা কাজে বাইরে যারা বের হয়েছেন, তারা শীতল বৃষ্টির ফোঁটায় কাবু হয়ে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহীতে। একই সঙ্গে সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশা ও মেঘে আকাশ ঢেকে থাকায় এখনও সূর্যের দেখা মেলেনি।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, সকাল ৬টা ১০ মিনিট থেকে আধাঘণ্টা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় শূন্য দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। মেঘে আকাশ ঢেকে রয়েছে। মেঘ কেটে গেলে সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও নিচে নামতে পারে।
সারাদেশে চলা সপ্তাহব্যাপী তীব্র শীতে নাকাল জনজীবনের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি নিয়েও কিন্তু উদ্বিগ্ন কৃষকরা। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার সময় থেকে জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়া শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোর থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর এলাকায়ও দেখা দেয় একই অবস্থা। কিছু সময় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এরপর আবারও কমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়া অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে তীব্র শীতের সঙ্গে বৃষ্টির কারণে বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। জেলার মাঠে মাঠে আলু, বোরো ধান এবং ভুট্টা রয়েছে। অসময়ে বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
অন্যদিকে ভোর থেকে বৃষ্টি থাকায় রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। দু-একজন জরুরি প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর ৫টা ৫০ মিনিট থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়, যা অব্যাহত রয়েছে। তাপমাত্রা কম এবং বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি।
চুয়াডাঙ্গার উপসহকারী কৃষি অফিসার হাকিমুর রহমান বলেন, বৃষ্টিতে বীজতলার ক্ষতির সম্ভাবনা হতে পারে। কোথাও পানি জমে থাকলে তা বের করে দিতে হবে। আলু ও সবজির ফুল-ফল নষ্ট হতে পারে। টমেটো ও আলুর ক্ষেতে রোগবালাই দেখা দিতে পারে। এসব ব্যাপারে কৃষকেরা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিতে পারেন।
গতকাল ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তার কাছাকাছি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও তা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল ও সড়ক এবং অভ্যন্তরীণ নৌ-যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
সুত্র: চ্যানেল২৪