চট্টগ্রাম, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ , ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাজেদা বেগম হাসপাতাল ফরিদপুরের চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার নতুন দুয়ার

প্রকাশ: ৯ জুন, ২০২৩ ৩:১৭ : অপরাহ্ণ

ফরিদপুরে পদ্মার দুর্গম চরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাজেদা বেগম নামে একটি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র। এটি খুলছে স্বাস্থ্যসেবার নতুন দুয়ার। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদ এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি তার মায়ের নামে করা হয়েছে। ফরিদপুর সদরের ডিক্রিরচরসহ আশপাশ এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর উৎকণ্ঠার প্রহর কাটাবে এ চিকিৎসাকেন্দ্র।আগামীকাল শনিবার (১০ জুন) ওই হাসপাতাল উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

ওই এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের চোখে মুখে নতুন স্বপ্ন দেখা যায়। এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে আনন্দের আবহ।

পদ্মার ভাঙনে নিজের জীবনের গতিপথও বারবার বদলেছে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচরের বাসিন্দা শেখ ইউসুফ আলীর। পরিবার-পরিজন নিয়ে একসময় বসবাস করতেন হাজীডাঙ্গি এলাকায়। নদীতে তা বিলীন হওয়ার পর আশ্রয় নেন পাশের এই এলাকায়। ডিক্রিরচরের ছোট্ট টিনের ঘরের আঙিনায় বসে ইউসুফ (৬০) বললেন, অসুখ-বিসুখ হলেই এই গ্রামের সবার টেপাখোলা বা ফরিদপুর শহরে যাওয়া লাগে। গ্রামের রাস্তাঘাট তেমন ভালো না। গাঙ পার হয়েই শহরে যেতে হয়। সব সময় নৌকা ও ট্রলার পাওয়া যায় না। ওপারে গিয়েই বাজার সদাই করতে হয়।

 

 

ইউসুফ আরও জানান, বছরখানেক আগে হঠাৎ মধ্যরাতে মেয়ের প্রসব বেদনা ওঠে। তাড়াহুড়া করে ঘোড়ার গাড়িতে মেয়েকে স্থানীয় ভাঙ্গিডাঙ্গি ঘাটে নেওয়া হয়। পথে পথে মেয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। ট্রলারে করে নদীর ওপারে একটি ভ্যানে তুলে ফরিদপুর সদর হাসপাতালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তারা। শহরে পুলিশ লাইন্সের সামনে পৌঁছার পর ভ্যানের ওপরেই সন্তান প্রসব করেন জিয়াসমিন। আজও সেই রাতের কথা ভুলতে পারেন না ইউসুফ।

 

 

ডিক্রিরচরের আরেক বাসিন্দা পারুল বেগম বললেন, অসুখ-বিসুখে আমাদের নদীর ওপার যাওয়া ছাড়া গতি ছিল না। গাড়ি-ঘোড়া, টাকা সবই লাগত। পরিবারের কারও বড় ধরনের অসুখ হলে আগে থেকেই শহরে গিয়ে আত্মীয়দের বাসায় উঠতাম। আমার স্বামীর দুবার হার্ট অ্যাটাক হয়। বহু ঝক্কি-ঝামেলা করে নদী পাড়ি দিয়ে ফরিদপুর হাসপাতালে নিয়েছিলাম। এখন ঘরের কাছে হাসপাতাল। বড় ধরনের দুশ্চিন্তা দূর হলো।

 

 

ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে পদ্মাপাড়ে ধলারমোড় এলাকা। সেখান থেকে ১০ টাকায় ট্রলার বা নৌকায় পদ্মা পাড়ি দিয়ে ডিক্রিরচরের ওপারে যেতে হয়। বর্ষায় সেখানকার যাতায়াতে প্রধান মাধ্যম নৌকা। শুষ্ক মৌসুমে যাতায়াতের বাহন ঘোড়ার গাড়ি ও মোটরসাইকেল। গ্রামবাসীর দুর্দশার কথা চিন্তা করে বছর পাঁচেক আগেই হাসপাতালটি তৈরির উদ্যোগ নেন এ কে আজাদ।

ডিক্রিচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু বললেন, ফরিদপুর সদর ও চরভদ্রাসনের পাঁচটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার বাসিন্দা এই হাসপাতাল থেকে সেবা নিতে পারবেন।

 

ফরিদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, মাজেদা বেগম স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। দুজন মেডিকেল অফিসার ছাড়াও ফার্মাসিস্ট ও দুজন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা থাকবেন। এখন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কেন্দ্রের মাধ্যমে সেখানে সীমিতভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। পরিপূর্ণভাবে হাসপাতাল চালু হলে প্রসূতিদের সব ধরনের সেবা, শিশু-কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টি সেবা এবং মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হবে। এই হাসপাতাল ডিক্রিরচরে স্বাস্থ্যসেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

 

 

ডিক্রিরচরের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. সালাউদ্দিন জানান, ডিক্রিরচরে বর্তমানে প্রসূতি নারী রয়েছেন ১৩৭ জন। তাদের মধ্যে প্রথমবারের মতো মা হবেন ৪০ জন। সেখানকার প্রসূতি নারীদের সবাই মাজেদা বেগম মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন।

 

Print Friendly and PDF