চট্টগ্রাম, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দুই হাত নেই, মুখ দিয়ে লিখেই উচ্চ শিক্ষায় রায়হানের সাফল্য

প্রকাশ: ৫ মে, ২০২৩ ৩:২২ : অপরাহ্ণ

ছোটবেলায় দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন দুই হাত। বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। কিন্তু দেড় বছরের মধ্যে মুখ দিয়ে লিখে আবারও শুরু করেন শিক্ষাজীবন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন বাহার উদ্দিন রায়হান। কর্ম জীবনেও রাখতে চান কৃতিত্বের স্বাক্ষর।

জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক তরুণ বাহার উদ্দিন রায়হান। যিনি অবিশ্বাস্য এক অদম্য চেষ্টায় একাডেমিক ক্যারিয়ারে দেখিয়েছেন তাক লাগানো সাফল্য। মুখ দিয়ে লিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তরের ফলাফলে পেয়েছেন প্রথম শ্রেণি। তার এই পথচলাটি মসৃণ ছিল না। পদে পদে ছিল বাধার কাঁটা। কেননা তার দুটি হাতই ছিল না। সেই গল্পটিও নিদারুণ করুণ।

মাত্র আট বছর বয়সে বৈদ্যুতিক দুঘর্টনায় নিভতে বসেছিলো রায়হানের জীবন প্রদীপ। কেটে ফেলতে  হয় দুই হাত। বন্ধ হয়ে যায় স্কুলে যাওয়া ও পড়াশোনা। কিন্তু দমে থাকার পাত্র নন রায়হান। মুখ দিয়ে শুরু করেন লেখা। ঘুরে দাঁড়ান নিজের ইচ্ছা শক্তিতে। তার সবশেষ ফল দেশের অন্যতম উচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন।

 

তার এ সাফল্যের গল্প বলতে গিয়ে জানান, ছোটবেলা থেকে অনেকেই বলেছে আমি আর পড়াশোনা করতে পারবো না। আমি তাদেরকে কোন জবাব দেইনি। চুপ করে ছিলাম। আমার কাজে তার প্রমাণ দিবে। আজ আমি খুশি। আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। আরও বেশি ভালো লাগছে আমার গ্রামের মানুষেরা যখন এই সাফল্যে খুশি হয়েছে। কারণ আমি পারিবারিক ভাবে একেবারে শূন্য থেকেই এখানে উঠে এসেছি।

 

 

 

পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনেও সব সময় সক্রিয় রায়হান। ফুটবল, সাইকেল চালানো, স্কেটিংসহ সব ধরনের খেলাধূলায়ও  তার সরব অংশগ্রহণ। সব কাজ করেন কারো  সহযোগিতা ছাড়াই। কর্মজীবনেও রাখতে চান সেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর। সেজন্য চান স্থায়ী ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ।

 

 

 

এই প্রসঙ্গে রায়হান বলেন, আমি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করতে চাই। দেশে ভালো ভালো কিছু এনজিও আছে। যেখানে স্থায়ীভাবে ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করা যায়। সে রকম সংস্থায় মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে কোন কাজের জন্য বাঁধা নয়, ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সেটি মানুষকে দেখাতে চাই। এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে আমাকে ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে এবং আমি চাকরিতে কোনভাবেই অন্য কারো কাছে বাড়তি কোন সুবিধাও প্রত্যাশা করি না। অন্য সবার মত স্বাভাবিকভাবেই আমি আমার কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করবো।

২০১৯ সালে ছাত্র অবস্থায় চালু করেন খাবার সরবরাহের প্রতিষ্ঠান। এক বছর ভালো  চললেও করোনাকালে এগোয়নি বেশি দূর। বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইমার হিসাবে কাজ  করছেন রায়হান। তার বাড়ি কক্সবাজারে চকরিয়ায়।

 

 

 

 

সূত্র – চ্যানেল২৪

Print Friendly and PDF