চট্টগ্রাম, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেসব কারণে স্বর্ণের এতো দাম

প্রকাশ: ২৩ মার্চ, ২০২৩ ১০:২৫ : পূর্বাহ্ণ

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে গিয়েছিল স্বর্ণের দাম। গত শনিবার (১৮ মার্চ) এক ঘোষণায় প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকা। লাখ টাকার চেয়ে মাত্র ১ হাজার ২০৬ টাকা কম। তবে চারদিন পর খানিকটা কমানো হয়েছে মূল্যবান এই ধাতুর দাম।

গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ঘোষণা দিয়ে বুধবার (২২মার্চ) থেকে স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করে বাজুস। সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম কমানো হয় ১ হাজার ১৬৭ টাকা। এতে দুই দিনে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৩৩৩ টাকা কমানো হলো। দর কমলেও এটি দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দাম। বৃহস্পতিবার (২৩মার্চ) থেকে সারা দেশে নতুন দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ।

বিশ্ববাজারে হঠাৎ স্বর্ণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণেই দেশেও তা লাখ টাকা ছুঁই ছুঁই অবস্থায় চলে যায়। বিশ্ববাজারে গত ৮ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১৭৩ ডলার বেড়ে ১ হাজার ৯৮৮ ডলারে ওঠে। যদিও বিশ্ববাজারের এই দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ নয়। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট স্বর্ণের দাম ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭০ ডলারে উঠেছিল। তখন দেশে স্বর্ণের ভরি ছিল ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা।

অবশ্য মূল কারণ ডলারের বিপরীতের টাকার অবমূল্যায়ন। মূলত এ কারণেই এবার বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম দুই হাজার ডলার না ছাড়ালেও দেশে প্রতি ভরির দাম লাখ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ভারতেও স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। সপ্তাহের শুরুতে সেখানে ১০ গ্রাম পাকা স্বর্ণের দাম ছিল ৫৮ হাজার ২২০ রুপি।

দামি এই ধাতুটির সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় প্রতি আউন্স সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরে পৌঁছায়। আবার এক বছর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ব অর্থনীতি নতুন করে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির রেকর্ড হতে থাকে। তখন স্বর্ণের দামও পাল্লা দিয়ে বাড়ে। গত বছরের ৮ মার্চ বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। তারপর কমতে থাকে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হওয়ার পর আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রাহকেরা ছোট ও মধ্যম সারির ব্যাংক থেকে আমানত তুলে বা সরিয়ে নিতে শুরু করেন। তাতে আরও কয়েকটি ব্যাংক ঝুঁকিতে পড়ে। জে পি মরগ্যান ও সিটি গ্রুপের নেতৃত্বে ১১টি ব্যাংক সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের পতন ঠেকাতে ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলার আমানত দেয়।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতার মধ্যেই সুইজারল্যান্ডের অন্যতম বড় ব্যাংক ক্রেডিট সুইস ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়ে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে ক্রেডিট সুইসকে শেষ পর্যন্ত ইউবিএস কিনে নেয়। পশ্চিমা বিশ্বের আর্থিক খাতের এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেই মূলত স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকে।

 

গত শনিবার (১৮ মার্চ) প্রকাশিত রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের একজন ধাতু ব্যবসায়ীকে উদ্ধৃত করা হয়। তাই ওন নামের ওই ব্যবসায়ী বলেন, ব্যাংক খাতে আরও খারাপ সংবাদ আসতে পারে এবং ফেড সুদের হার বাড়াতে পারে, এই আশঙ্কায় স্বর্ণের দাম বাড়ছে।

 

জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়াল গণমাধ্যমকে বলেন, পশ্চিমা ব্যাংক খাত নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাতে সোনার সংকট দেখা দিয়েছে। সোনার উৎপাদন বাড়লেও তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হওয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ধারণা, বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ডলার ছাড়াবে। তারপর আবার দাম কমবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতের অবস্থা যদি আরও খারাপ হয়, তাহলে ২ হাজার ২০০ ডলারে যেতে পারে স্বর্ণের দাম।’

 

সূত্র – চ্যানেল২৪

Print Friendly and PDF