চট্টগ্রাম, রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেট্রোবাংলার কাছে পাওনা ৫ হাজার ২শ‘ কোটি টাকা নিয়ে বিপাকে চট্টগ্রাম কাস্টমস

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ১২:১৮ : অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)‘র কাছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব বকেয়া পড়েছে ৫ হাজার ২২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির শুল্ক বাবদ পেট্রোবাংলার কাছে এ ঢাকা পায় কাস্টমস।

কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা গেল বছরের ডিসেম্বর থেকে শুল্ক পরিশোধ করছে না। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে তারা আমদানির নথিপত্রও জমা দিচ্ছে না। ফলে একদিকে রাজস্ব অনাদায়ী থাকছে। যা কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে চরমভাবে বিঘ্নিত করছে। অন্যদিকে বিল অব এন্ট্রি দাখিল না করায় সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ডে তথ্য হালনাগাদ সম্ভব হচ্ছে না। যা পুরো সিস্টেমে জটিলতা তৈরি করেছে।

এলএনজি আমদানির দায়িত্বে রয়েছে পেট্রোবাংলার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল)। প্রতিষ্ঠানটির এমডি জাভেদ চৌধুরীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। আর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমানও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।আমদানি করা এলএনজি জাহাজ থেকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে থাকা ভাসমান টার্মিনাল বা ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) খালাস করা হয়। সেখান থেকে সরাসরি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। আইন অনুযায়ী শুল্কায়নের জন্য বিল অব এন্ট্রিসহ আনুষঙ্গিক দলিলাদি কাস্টমসে দাখিল করা লাগে। তবে এর ব্যত্যয় ঘটছে। এক্ষেত্রে তথ্যের জন্য শিপিং এজেন্টের জমা করা ইমপোর্ট জেনারেল মেনিফেস্ট-আইজিএমের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কাস্টমসকে। এ নিয়ে দপ্তরটিতে দেখা দিয়েছে অস্বস্তি।সূত্র জানিয়েছে, পেট্রোবাংলার কাছে কাস্টমসের বকেয়া শুরু হয় গেল বছরের ডিসেম্বর থেকে। ওই মাসে পাওনা ১২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৭৫৮ কোটি ৮ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৯৮ কোটি ৯৮ লাখ, মার্চে ২৩২ কোটি ৮১ লাখ, মে-তে ৪৫৮ কোটি ৭৩ লাখ, জুনে ১৩শ‘ ৮৩ কোটি ৫৪ লাখ, জুলাইতে ৪৭ কোটি ৩ লাখ আর আগস্টে ৭৭১ কোটি ১ লাখ টাকা। ৬৯টি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে এ টাকা জমে।

এছাড়া গেল এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যেসব বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি তার বিপরীতে ৩০টি আইজিএমের ওপর ভিত্তি করে আনুমানিক রাজস্ব নির্ধারণ করা হয় ১৩শ‘ ৫০ কোটি টাকা।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বকেয়া টাকা পরিশোধ এবং নথিপত্র জমা দেয়ার জন্য পেট্রোবাংলাকে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়া হয়েছে। আবার বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর-বিন লক ও পণ্য খালাস বন্ধ এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়। তবে কিছুতেই কিছু হয়নি।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা জানায়, অর্থবিভাগের কাছ থেকে ভর্তুকির টাকা পেলে শুল্ক পরিশোধ করা হবে। কিন্তু কবে নাগাদ তা হবে, বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। এমন বাস্তবতায় সংকট সমাধানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে অক্টোবরের শেষদিকে চিঠি দেয় কাস্টমস। তবে তাতেও কাজ হয়নি।

কাস্টমস বলছে, আমদানি করা পণ্যের শুল্কায়নপূর্বক রাজস্ব পরিশোধে আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পণ্য আমদানির ৬ মাস পরেও নথিপত্র জমা না করাও আইনের লঙ্ঘন। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

Print Friendly and PDF