প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর, ২০২২ ২:৫৫ : অপরাহ্ণ
এটা খুবই উভয়সংকটের মধ্যে ফেলে দেওয়ার মতো অবস্থা। বিশেষ করে শিশুদের হাতে কোন বয়সে স্মার্টফোন দেওয়া উচিত তা নিয়ে। কারণ পৃথিবীর সব বাবা-মায়েরা তার সন্তানকে সকল ধরনের বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত রাখতে চান। কিন্তু সেখানে যদি একটি স্মার্টফোন আপনার সন্তানের ভবিষ্যতকে নষ্ট করে দেয় তাহলে সেটা আপনার জন্য জীবনব্যাপী কষ্ট হয়ে দাঁড়াবে। যাকে তুলনা করা যেতে পারে ‘প্যানরোডা বক্সের’ সঙ্গে।
স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সম্পর্কিত যে চটকদার খবর রয়েছে তাতে যে কোনো সময় যে কেউ তার সন্তানকে এগুলো ব্যবহারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
বর্তমান সময়ের বাবা-মায়েরা সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে ভিশন সমস্যার মধ্যে পড়েছে। কারণ তারা বুঝতে পারছেন না যে, কোন বয়সে এটি বাচ্চাদের ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত। বিখ্যাত ‘সেলিব্রটি ম্যাডোনা ’ বলেছেন, তিনি তার সন্তানকে ১৩ বছর বয়সে মোবাইলফোন ব্যবহার করতে দিয়ে ভুল করেছেন। যদি তিনি আবার সুযোগ পেতেন তাহলে এ ভুলটি আর করতেন না।
অপর দিকে যখন আপনি দেখতে পাবেন আপনার সন্তানের সহপাঠী সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করছে তখন আপনি এর দ্বারা সন্তানকে স্মার্টফোন ব্যবহারে সায় দিতে পারেন। এছাড়া যখন একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে সহজে ই-মেইল ব্যবহার, অনলাইনে কেনাকাটা কিংবা ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যাচ্ছে তখন আপনিও এটি ব্যবহার না করে থাকতে পারবেন না।
শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের ওপর স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে এখনও অনেক উত্তরহীন প্রশ্ন রয়েছে, তবে বিদ্যমান গবেষণা তাদের প্রধান ঝুঁকি এবং সুবিধাগুলোর কিছু প্রমাণ সরবরাহ করে।
স্মার্টফোন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে শিশুদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে এরকম তথ্য কোনো গবেষণায় বলা হয়নি। তবে গবেষণাগুলোতে যুবকদের চেয়ে কিশোর-কিশোরিদের প্রতি বেশি নজর দেওয়া হয়েছে। কারণ এ বয়সে তারা ফোন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার বেশি করে থাকেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন সন্তানেরা স্মার্টফোন ব্যবহার করার পর্যায়ে পৌছে যাবে কিংবা সে যদি একটি মোবাইল ফোনের মালিকও হয়ে যায় তাহলে তার অভিভাবক হিসেবে আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের কমিউনিকেশন রেগুলেটর প্রতিষ্ঠান ‘অফকম’র তথ্য বলছে, যুক্তরাজ্যে ১১ বছর বয়সী অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এক সময় এ হার ৪৪ শতাংশ থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১ শতাংশে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ বাবা-মা বলছেন তারা তাদের সন্তানের ৯ থেকে ১১ বছর হলেই স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয় এ বয়সে তারা একটি স্মার্টফোনের মালিকও হচ্ছেন। এছাড়া এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরোপের ১৯টি দেশের ৮০ শতাংশ শিশু ১৬ বছর বয়সেই স্মার্টফোন ব্যবহার করছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কিত একটি ইউরোপীয়ান রিপোর্টে বলা হচ্ছে, জন্ম থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনলাইন ঝুঁকি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। এছাড়া এর চেয়ে বেশি বয়সী শিশুরা স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে যেয়ে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
বলা হচ্ছে স্মার্টফোনের কারণে শিশুরা এখন ঘরের বাইরে কম বের হচ্ছে। তবে ড্যানিশ এক গবেষণায় উঠে এসেছে ভিন্ন কিছু। এতে বলা হয়েছে ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুরা যখন ফোন নিয়ে ঘরের বাইরে যায় তখন তাদের স্বাধীনভাবে চলাচল নিয়ে বাবা-মায়েরা কম চিন্তা করেন। কারণ তারা সন্তানের সঙ্গে যখন-তখন যোগাযোগ করতে পারে। শিশুরাও বলছে, ফোন তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযাগিতা করে থাকে।
গবেষণায় ১৭ হাজার কিশোর-কিশোরী অংশগ্রহণ করেন। যাদের বয়স ছিল ১০ থেকে ২১ বছর। গবেষকরা দেখতে পায়, ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সেই মেয়েরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শুরু করেছে। অন্যদিকে এ মাধ্যম ব্যবহার করতে ছেলেরা একটি বেশি সময় নিচ্ছে অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৫ বয়সে তারা এটি ব্যবহার করছে।